সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আনের অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে সাহাবীদের মতবিরোধ

"কেবল সালাফীরাই কুর'আন ও হাদিস সাহাবীদের মতো বুঝেন। অন্যরা নিজেদের মনগড়া কোর'আন ও হাদিস ব্যাখ্যা করেন।" -এ ধারণাটি ভুল।

কোর'আনের একই আয়াতের ব্যাখ্যা একেক সাহাবী একেক রকম দিয়েছেন। ফলে, ইসলামের একেক স্কুল একেক সাহাবীর মতামতকে গুরুত্ব দেন।

যেমন, সূরা নাজমের ছোট্ট একটা আয়াত দেখুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন -

ما كذب الفؤاد ما رأى

"(রাসূলের) 'ফুয়াদ' মিথ্যা বলেনি, যা সে দেখেছে।" [সূরা ৫৩/নাজম - ১১]

এ একটি আয়াত থেকে প্রচুর ভিন্ন ভিন্ন মত সাহাবীদের থেকে এসেছে।

প্রথমত, এখানে 'ফুয়াদ' শব্দের অর্থ নিয়ে অনেক ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেন 'ফুয়াদ' অর্থ অন্তর, কেউ বলেন চোখ, কেউ বলেন মুখ, এবং কেউ বলেছেন ফুয়াদ অর্থ ব্রেইন।

দ্বিতীয়ত, এ আয়াতে কাকে দেখার কথা বলা হয়েছে, এ নিয়েও সাহাবীদের মাঝে অনেক ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, এখানে আল্লাহকে দেখার কথা বলা হয়েছে, এবং কেউ বলেছেন এখানে জিব্রাঈলকে দেখার কথা বলা হয়েছে।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা) বলেন -

عن ابن عباس قال: إن الله اصطفى إبراهيم بالخلة واصطفى موسى بالكلام واصطفى محمدا صلى الله عليه وسلم بالرؤية.
[تفسير البغوي - إحياء التراث 4/ 304]

"আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ)-এর সাথে কথা বলে মুসা (আ)-কে সম্মানিত করেছেন, এবং মোহাম্মদ (স)-এর সাথে দেখা দিয়ে মুহাম্মদ (স)-কে সম্মানিত করেছেন।"

অন্যদিকে, একই আয়াতের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রা) বলেন -

وكانت عائشة رضي الله عنها تقول: لم ير رسول الله صلى الله عليه وسلم ربه.
[تفسير البغوي - إحياء التراث 4/ 304]

"রাসূল (স) আল্লাহকে কখনোই দেখেননি।"

তিনি আরো বলেন -

"من حدثك أن محمدا رأى ربه فقد كذب
[تفسير البغوي - إحياء التراث 4/ 304]

"যে ব্যক্তি বলবে যে, রাসূল (স) আল্লাহকে দেখেছে, সে মিথ্যাবাদী।"
_________

দেখুন, একই আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবীদের থেকে ভিন্ন ভিন্ন অনেক মত এসেছে। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় সূফীরা ইবনে আব্বাস (রা)-এর মত গ্রহণ করেন, অন্যদিকে সালাফীরা আয়েশা (রা)-এর মত গ্রহণ করেন।

সুতরাং, এ কথা বলা ঠিক নয় যে, কেবল সালাফীরাই সাহাবীদের মতো কোর'আন হাদিস বুঝেন, অন্যরা সাহাবীদের মত বুঝেন না। আসল কথা হলো, কোর'আন ও হাদিসের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সাহাবী বিভিন্ন মত দেয়ার কারণে ইসলামে ভিন্ন ভিন্ন মতের স্কুল গড়ে উঠেছে। কিন্তু, ইসলামের সকল স্কুল-ই সাহাবীদের মতো চলার চেষ্টা করেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...