সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজনীতি করা সকলের জন্যে ফরজ নয় - ইমাম গাজালী

রাজনীতি করা সকল মুসলিমের জন্যে ফরজ নয়, কিন্তু ধর্ম পালন করা সকল মুসলিমের জন্যে ফরজ। যদি ধর্ম ও রাজনীতিকে আমরা এক করে ফেলি, তাহলে ধর্ম পালনের মতো রাজনীতি করাও প্রতিটি মুসলিমের জন্যে ফরজ হয়ে যাবে। এ কারণে ইমাম গাজালি রাজনীতি ও ধর্মের মধ্যে একটি পার্থক্য করেছেন।

ইমাম গাজালির মতে, ধর্মীয় কাজগুলো হলো ফরজে আইন, যা সকল মুসলিমের বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। কিন্তু রাজনীতি হলো ডাক্তারি করা বা কৃষিকাজ করার মতো একটি ফরজে কিফায়া। সকল মুসলিমের জন্যে রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই, কিছু মুসলিম রাজনীতি করলেই হবে।


ইমাম গাজালি বলেন -

فرض الكفاية فهو علم لا يستغني عنه في قوام أمور الدنيا كالطب إذ هو ضروري في حاجة بقاء الأبدان وكالحساب فإنه ضروري في المعاملات وقسمة الوصايا والمواريث وغيرهما وهذه هي العلوم التي لو خلا البلد عمن يقوم بها حرج أهل البلد وإذا قام بها واحد كفى وسقط الفرض عن الآخرين

فلا يتعجب من قولنا إن الطب والحساب من فروض الكفايات فإن أصول الصناعات أيضاً من فروض الكفايات كالفلاحة والحياكة والسياسة
[إحياء علوم الدين 1/ 16]

"ফরজে কিফায়া হলো এমন জ্ঞান, যা দুনিয়াবি কাজের সাথে সম্পর্কিত, যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞান। শরীরের সুস্থতার জন্যে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রয়োজন। একইভাবে অর্থনীতি শেখাও ফরজে কিফায়া। কারণ, টাকাপয়সার লেনদেন, কাউকে সম্পদ দান করা, এবং মৃত-ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন করার জন্যে গণিত লেখা প্রয়োজন। কোনো দেশে এসব জ্ঞানে অভিজ্ঞ কোনো মানুষ না থাকলে দেশের অধিবাসীদের বিপদের অন্ত থাকে না। কিন্তু, কেউ একজন যদি এ জ্ঞান অর্জন করে, তাহলে অন্য মানুষদের আর এ ফরজটি পালন করতে হবে না। আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও অর্থনীতিকে ফরজে কিফায়া বলেছি, তাতে অবাক হবেন না। বিভিন্ন শিপ্লকর্মও ফরজে কিফায়া। যেমন, কৃষিকর্ম, গার্মেন্টস শিল্প, এবং রাজনীতি এগুলোও ফরজে কিফায়া।" [১ম খণ্ড, পৃ - ৩৮]

ইমাম গাজালির মতে, রাজনীতি হলো একটি দুনিয়াবি কাজ। আর দুনিয়ার প্রয়োজনে যেসব কাজ করতে হয়, তা ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ, ডাক্তারদের মতো কিছু মুসলিম রাজনীতি করলেই সকলের উপর ফরজ আদায় হয়ে যাবে। সকল মুসলিমকে রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই।

রাজনীতিকে যখন আমরা ধর্মের সাথে মিশিয়ে ফেলবো, তখন সবার জন্যে রাজনীতি করা ফরজ হয়ে যাবে; কিন্তু রাজনীতি করা সবার জন্যে ফরজ নয়। সুতরাং, রাজনীতি ও ধর্মের পার্থক্য থাকাটা জরুরী।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...