সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইমাম আবু হানিফাও কি কাফের?

কেবল ইবনে সিনা বা ইবনে আরাবিকে নয়, স্বয়ং ইমাম আবু হানিফাকেও কাফের, বিদায়াতি, মুরজিয়া ইত্যাদি ট্যাগ দিয়েছিলো তাঁর জামানার মোল্লারা।

ইমাম আবু হানিফার যে পাঁচটি ছোট ছোট লেখা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে একটি ইমাম আবু হানিফাকে বিভিন্ন ট্যাগ দেয়া প্রসঙ্গে।

উসমান আল বাত্তী নামে আবু হানিফার একজন ছাত্র ছিলো। উসমান যখন আবু হানিফার থেকে পড়াশুনা শেষ করে, বাগদাদ থেকে বসরা গেলেন, তখন বসরার তৎকালীন মোল্লারা বলছিলেন, "তোমার উস্তাদ আবু হানিফা তো মুরজিয়া হয়ে গেছে।"

শিক্ষকের বদনাম শুনে ছাত্র খুব ব্যথিত হলেন। এবং উস্তাদ আবু হানিফার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বললেন যে, লোকে বলাবলি করছে আপনি নাকি মুরজিয়া হয়ে গেছেন।

এর জবাবে আবু হানিফা তাঁর ছাত্রকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি বলেন -

كتبتَ تذكرُ أنهُ بلغكَ أني من المُرجِئَةِ،.

"তুমি লিখেছো, তুমি নাকি শুনেছো, আমি মুরজিয়া হয়ে গেছি।"

এরপর "আমি মুরজিয়া নই" -এ কথা ইমাম আবু হানিফা বলেননি। তিনি বলেন, অন্য কেউ তোমাকে পথভ্রষ্ট বললেই যে সে নিজে সৎ পথে আছে, ব্যাপারটা এমন নয়। কোর'আনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত সবাইকেই তিনি পথভ্রষ্ট করেন। [সূত্র - ৪/১৭৬]

সুতরাং, কেউ আপনাকে যতই কাফির বা পথভ্রষ্ট বলুক না কেন, হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীতে এমন কেউ ছিলো না, যাকে অন্য কেউ পথভ্রষ্ট বলেনি।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...