সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'আমার দেখা তুরস্ক' বইয়ের বুক রিভিউ

সারা বিশ্বের মুসলিম জাতীসমূহের জন্যে তুরস্ক একটি অনুকরণীয় আদর্শ দেশ হবে একদিন, এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের ভারতবর্ষের বিখ্যাত আলেম ও স্কলার আবুল হাসান আলী নদভী। তাঁর স্বপ্ন যখন বাস্তবায়িত হলো, তখন তুরস্ককে নতুন করে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে তিনি আর পৃথিবীতে নেই। তাঁর এ দায়িত্ব নিয়েছেন Hafijur Rahman ভাইয়া।

হাফিজ ভাইয়া বাংলাদেশের মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করছেন, কেন এবং কিভাবে তুরস্ক বাংলাদেশের জন্যে অনুকরণীয় হতে পারে।

'আমার দেখা তুরস্ক' বইটার হার্ড কপি আমার হাতে আসার আগেই বইটা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। আজকে বইটা হাতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।

আমার ধারণা এই বইটা লিখার পিছনে হাফিজ ভাইয়ের কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিলো।

১ম উদ্দেশ্য।

যারা আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি করবে, তাঁরা কেমন বাংলাদেশ গড়ার জন্যে রাজনীতি করতে হবে, তার একটি ধারণা দেয়া। বইয়ের ৩য় এবং ৫ম পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন লেখক।

যেমন,
i) তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য।
ii) বাংলাদেশের মত তুরস্কে একসময় স্বাস্থ্যখাত ও রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো, কিভাবে সেখান থেকে বর্তমানে ইউরোপের সেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও যাতায়াত সুবিধা তুরস্কে সৃষ্টি হলো।
iii) তুরস্কের সেক্যুলারিজমের সাথে বাংলাদেশের সেক্যুলারিজমের মিল ও অমিল।
iv) তুরস্কে ইসলামী রাজনীতি পরিচালনার পদ্ধতি, এবং এর থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের শিক্ষা নেয়ার বিষয়গুলো।

উপরোক্ত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ কি শিক্ষা নিতে পারে, এবং কোনো কোন ক্ষেত্রে তুরস্ককে অনুকরণ করা যায়।

২য় উদ্দেশ্য।

যারা তুরস্ককে নিজ চোখে দেখতে চান, অর্থাৎ, যারা বাংলাদেশের চোখে তুরস্ককে দেখতে চান, তাঁরা বিভিন্ন সময় ব্যস্ততা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে তুরস্কে আসতে পারেন না। ইন্টারনেট বা ইউটিউবে তুরস্ককে দেখা যায়, কিন্তু সেটা অন্য দেশীদের চোখে দেখতে হয়, বাংলাদেশীদের চোখে দেখা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ও কৌতূহলকে বিবেচনায় নিয়েই এ বইটি লিখা হয়েছে। ফলে যারা সরাসরি তুরস্ককে দেখার সুযোগ হয়নি, তারা বইটা পড়েই অনেক কম সময়ে ও কম খরচে তুরস্ক ঘুরার অভিজ্ঞতা পেয়ে যাবেন।

বইয়ের ১ম, ২য় ও ৪র্থ অধ্যায়ে তুরস্কের নানা সংস্কৃতি ও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশের টেলিভিশনে তুরস্কের নাটক-সিরিয়াল দেখেন, তাদের অনেক প্রশ্নের জবাব এখানে পাওয়া যাবে।

৩য় উদ্দেশ্য।

যারা বইটি পড়েও তুরস্ক সম্পর্কে জানার আগ্রহ মিটবে না, তাদের জন্যে তুরস্কে আসার কিছু সহজ পদ্ধতি বলে দেয়া হয়েছে বইয়ের সবশেষে। অর্থাৎ, কিভাবে তুরস্কে পড়াশুনার জন্যে স্কলারশিপ পাওয়া যায়, কিভাবে আবেদন করতে হয়, এসব।

বইটার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, আমি এ বইটা পড়েছি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার একজন কারিগর হবার ইচ্ছায়। তাই লেখক হাফিজ ভাইয়া ও প্রকাশক Noor Mohammad ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...