সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক বছর পর বিয়ের অভিজ্ঞতা

বৈবাহিক জীবনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত এক বছরে অনেক কিছু শিখেছি।

১) বউ হলো বাচ্চাদের মতো। বাচ্চারা যেমন বড়দের থেকে দেখে দেখে শিখে, বউরাও তেমনি জামাইয়ের থেকে দেখে দেখে শিখে। জামাই যদি কথায় কথায় রাগ করে, তাহলে বউও কথায় কথায় রাগ করবে। আর, জামাই যদি সবসময় বউয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করে, তাহলে বউও সব সময় জামাইয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। সংসার ঝগড়াপূর্ণ হবে, নাকি ভালোবাসাময় হবে, তা বউয়ের ওপর নয়, বরং জামাইয়ের উপর শতভাগ নির্ভর করে।

২) বিয়ের আগে জামাই যদি সংকল্প করে, আমি বউয়ের সাথে কখনোই রাগারাগি করবো না। তাহলে আসলেই বউয়ের সাথে কোনো ধরণের রাগারাগি হয় না। এমনকি এক মিনিটের জন্যেও কথা কাটাকাটিও হয় না।

৩) অনেকে মনে করেন, বিয়ের পর বউকে জামাইয়ের মনের মতো পরিবর্তন করে ফেলা যাবে। কিন্তু এ ধারণাটা ভুল। বিয়ের পর কোনো মেয়ের আচার-আচরণ পরিবর্তন করতে চাইলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাই এমন মেয়েকে বিয়ে করুন, যে মেয়ের ওপর বিয়ের পর কোনো শর্ত বা নিয়ম আরোপ করার প্রয়োজন হবে না।

৪) বিয়ের সময় অধিকাংশ ছেলেরা মেয়েদেরকে অনেক মিথ্যা আশা দেয়। ফলে পরবর্তীতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। বিয়ের সময় ছেলেদের উচিত নিজেদের সমর্থের চেয়েও অনেক কম আশা দেয়া। ধরুন, আপনি যদি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে বলতে হবে, আপনি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। এতে আপনার বউ বিয়ের পরে তার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু পাবে, এবং সে সবসময় খুশী থাকবে।

৫) বিয়ের আগে বা বিয়ের সময়ে আপনার সব যোগ্যতা প্রকাশ করে ফেললে, বিয়ের পর আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে মুগ্ধ করার জন্যে বাড়তি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাই বিয়ের সময় নিজের যোগ্যতা কম দেখানো ভালো; ফলে বিয়ের পরে বাড়তি যোগ্যতা অর্জনের চাপ না নিয়েই মুগ্ধতা ধরে রাখা যাবে অনেকদিন।

৬) ছেলেরা বিয়ের সময়ে এমন মেয়ে খোঁজে, যে মেয়ের চেহারা ছেলের চেহারার চেয়ে সুন্দর। ছেলেরা চায়, মেয়ের বাবার টাকা-পয়সা হবে ছেলের বাবার টাকা-পয়সার চেয়ে বেশি। মেয়ের বংশ হতে হবে ছেলের বংশ থেকে উন্নত। অথচ, যে মেয়ের সবকিছু ছেলের চেয়ে বেশি, সে মেয়ে ছেলের আনুগত্যশীলা হয় না। তাই এমন মেয়ে বিয়ে করা দরকার, যে মেয়ে সবকিছুতে ছেলের চেয়ে কম হবে।

৭) পৃথিবীতে এমন কোনো মেয়ে বা ছেলে নেই, যে শতভাগ পারফেক্ট। তাই বিয়ের পরে ছেলে বা মেয়ের কোনো ক্রুটি ধরা পড়লে, সেটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করা উচিত। কারণ, আপনি যাকেই বিয়ে করুন না কেন, তার কিছু না কিছু ত্রুটি থাকবেই, যেমন আমার বা আপনার হাজারটা ক্রুটি আছে।

৮) বিয়েকে কেউ আনন্দ হিসাবে নেয়, কেউ ইবাদত হিসাবে নেয়। যারা আনন্দের জন্যে বিয়ে করেন, তারা বিয়ের পরপর-ই হতাশ হন, এবং এ হতাশা চলতে থাকে আজীবন। আর, যারা ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করেন, তারা বউয়ের উপর সন্তুষ্ট হন, এবং এই সন্তুষ্টি চলতে থাকে আজীবন।

৯) ইমাম গাজালি বলেন -

বিয়ে করার বিপদ থেকে এমন ব্যক্তিই নিরাপদ থাকবে, যে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, নারী চরিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ, নারীদের কটু কথায় ধৈর্যশীল এবং তাঁদের হক আদায় করতে আগ্রহী। কিন্তু এখন তো অধিকাংশ লোক নির্বোধ, কটুভাষী, কঠোর স্বভাব এবং বেইনসাফ। যদিও নিজের জন্যে খুব ইনসাফ প্রত্যাশী। এরূপ লোকদের জন্যে অবিবাহিত থাকাই অধিক নিরাপদ। [এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, মুহিউদ্দীন খান অনূদিত, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭]

১০) ঘরে বউ না আসলে মায়ের দুঃখ বুঝা যায় না, অথচ, অনেক মা ছেলেকে বিয়ে করাতে চায় না। বিয়ে না করলে সংসারের কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় না।

১১) নিজের বিয়ের জন্যে নিজেই কাউকে পছন্দ করাটা প্রতিটি ছেলে-মেয়ের মৌলিক অধিকার। পছন্দ করার ক্ষেত্রে বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে সাহায্য করতে পারেন, তবে জোর করাটা অন্যায়। যদিও, বিয়ের জন্যে পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের পরামর্শ বন্ধুদের পরামর্শ থেকে অনেক বেশি উত্তম।

১২) ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। কিন্তু এ গুন বিয়ের আগে অর্জন করা যায় না। বিয়ে না করলে কাউকে ভালোবেসে ক্ষমা করার বিষয়টি অনুধাবন করা যায় না।

১৩) বিয়ে কেবল দু'জন মানুষের সম্পর্ক না। বিয়ে হলো দু'টি পরিবার ও দুটি পরিবেশের সম্পর্ক। দুটি পরিবার ও দুটি পরিবেশ একে অপরকে গ্রহণ করতে না পারলে, দুজন ভালো মানুষের মাঝেও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

১৪) ছাত্র বয়সে বিয়ে করার অনেক সুবিধা। বউ বা শ্বশুর বাড়ির কোনো মানুষ জামাই থেকে কোনো কিছুই আশা করে না। ফলে, বিয়ের কারণে মাথায় কখনো টাকা-পয়সার চাপ থাকে না।

১৫) বিয়ের আগে যারা প্রেম করে না, তাদের প্রেমটা শুরু হয় বিয়ে পরেই। এবং এ প্রেমটা বেশ টেকসই হয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...