সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজনীতির সাথে ধর্মের সম্পর্ক - ইবনে খালদুন

রাজনীতি মানে সংঘবদ্ধভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোনো রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্যে কি ধর্ম বা ধর্মীয় ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?

ইবনে খালদুন বলবেন – "না, রাজনীতির জন্যে ধর্ম প্রয়োজন নেই। কিন্তু, রাজনীতির পূর্ণতার জন্যে ধর্মের অবদান রয়েছে।

ইবনে খালদুন তাঁর মুকাদ্দিমায় কিছু মানুষের বক্তব্য খণ্ডন করেছেন, যারা বলেন -

ثم يقولون بعد ذلك و ذلك الحكم يكون بشرع مفروض من عند الله يأتي به واحد من البشر و أنه لا بد أن يكون متميزاً عنهم بما يودع الله فيه في خواص هدايته ليقع التسليم له و القبول منه حتى يتم الحكم فيهم و عليهم من غير إنكار و لا تزيف

[ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে শরিয়তের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। ঐ ব্যক্তি অবশ্যই এমন একজন বিশেষ ব্যক্তি হবেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা হিদায়েত দান করেছেন। ফলে তিনি সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে আনুগত্য ও গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। ]

উপরের যুক্তিকে খণ্ডন করে ইবনে খালদুন বলেন –

و هذه القضية للحكماء غير برهانية كما تراه إذ الوجود و حياة البشر قد تتم من دون ذلك بما يفرضه الحاكم لنفسه أو بالعصبية التي يقتدر بها على قهرهم و حملهم على جادته فأهل الكتاب و المتبعون للأنبياء قليلون بالنسبة إلى المجوس الذين ليس لهم كتاب فإنهم أكثر أهل العالم و مع ذلك فقد كانت لهم الدول و الآثار فضلاً عن الحياة و كذلك هي لهم لهذا العهد في الأقاليم المنحرفة في الشمال و الجنوب بخلاف حياة البشر فوضى دون وازع لهم البتة فإنه يمتنع و بهذا يتبين لك غلطهم في وجوب النبوات و أنه ليس بعقلي و إنما مدركه الشرع كما هو مذهب السلف من الأمة و الله ولي التوفيق و الهداية

[ দার্শনিকদের উপরোক্ত আলোচনা একেবারেই যুক্তিহীন। কারণ, (ধর্মীয় ব্যক্তিবিশেষ) ছাড়াও মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকে, এবং মানুষের জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করে। একজন শাসক নিজেই অথবা সংঘবদ্ধ চেতনার সাহায্যে অন্য মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আসমানি কিতাবপ্রাপ্ত নবী-রাসূলদের অনুসারীদের চেয়ে কিতাবহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ হলো কিতাবহীন, ওহীর সন্ধান তারা পায়নি। তাদের কেবল জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে, এমন নয়, তাদেরও রাষ্ট্র ও ঐতিহ্য রয়েছে। পৃথিবীর দক্ষিণ ও উত্তরে শীতোষ্ণ অঞ্চলগুলোতে অনেক মানুষ জীবনযাপন করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাহীন নৈরাজ্য রয়েছে, এমন নয়। সুতরাং, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে নবুয়তের বা ধর্মীয় ব্যক্তিবিশেষের যে অপরিহার্যতার যুক্তি দেখানো হয়, তা একান্তই ভ্রান্তিপূর্ণ।]

______
ইবনে খালদুনের মতে, ধর্ম রাজনীতির ভিত্তি নয়, বরং রাজনীতির পূর্ণাঙ্গতা দান কারী একটি উপাদান।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...