সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আনের হরকত ও নোকতা ইতিহাস

কোর’আন নাযিলের সময়ে আরবি ভাষার অক্ষরগুলোতে কোনো নোকতা বা হরকত ছিলো না। ফলে রাসূল (স) যখন তাঁর সাহাবীদেরকে দিয়ে কোর’আন লেখাচ্ছিলেন, তখন কোর’আনের অক্ষরগুলোর মধ্যেও কোনো নোকতা বা হরকত ছিলো না।

ছবি দুটি দেখুন, এগুলো প্রথম জামানার লিখিত কোর’আন। দ্বিতীয় ছবিটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন কোর’আনের একটি ছবি, যা চামড়ার উপর লিখিত হয়েছে।

quranThe manuscripts are written with ink in Hijazi - an early form of Arabic [Birmingham University]

প্রথম ছবিটিতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” সহ সূরা নাস লিখা রয়েছে। দ্বিতীয় ছবিতে সূরা মারইয়ামের শেষ অংশ এবং সূরা তাহার প্রথম অংশ লিখা রয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো নোকতা বা হরকত নেই।

‘হা’ (ح), ‘খা’ (خ), ‘জীম’ (ج) সবই দেখতে তখন 'হা' (ح) এর মতো ছিলো। অথবা, বা (ب), তা (ت), চা (ث), ছীন (س), সীন (ش), নুন (ن), ইয়া (ي) সবই দেখতে তখন (ىىىىىىىىىىىىىىىىىى) এমন ছিলো। অর্থাৎ, কোনো অক্ষরেই নোকতা ছিলো না। এখানে সংযুক্ত করা কোর’আনের প্রাচীন ছবি দুটি দেখলে বিষয়টি আরো সহজভাবে আমরা উপলব্ধি করতে পারবো।

উদাহরণ স্বরূপ, নোকতা ছাড়া ىىىىوا এ অক্ষরগুলোকে (تبينوا) “তাবাইয়ানু” পড়া যায়, আবার, (تثبتوا) “তাছাব্বাতু”ও পড়া যায়।

অক্ষরগুলোর মধ্যে কোনো নোকতা ও হরকত না থাকার কারণে তৎকালীন আরবের লোকেরাও তা পড়তে পারতেন না। যিনি কোর’আন মুখস্থ পারতেন, তিনি অন্যদেরকে অক্ষরগুলোর উচ্চারণ করে শুনিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হতো।

কিন্তু, মানুষ যাতে নিজে নিজে কোর’আন পড়তে পারে, সেজন্যে আলী (রা) তাঁর ছাত্র আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী’কে কিছু নিয়ম আবিষ্কার করতে বললেন। আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী তখন নোকতার সাহায্যে হরকত দেয়ার দারুণ একটি নিয়ম আবিষ্কার করলেন।

আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী তাঁর লেখককে বললেন, আমি যখন কোনো অক্ষরের উচ্চারণে ঠোঁটকে “উ” এর মতো করবো, তখন তুমি সে অক্ষরে বাম পাশে একটি নোকতা দিবে। আমি যখন কোনো অক্ষরের উচ্চারণে ঠোঁটকে “আ” এর মতো করবো, তখন সেই অক্ষরের উপরে একটি নোকতা দিবে। এবং আমি যখন কোনো অক্ষরের উচ্চারণে ঠোঁটকে “ই” এর মতো করবো, তখন অক্ষরটির নিচে একটি নোকতা দিবে। যেমন, ‘হু’ (.ح), ‘হা’ (خ), ‘হি’ (ج)।

অর্থাৎ, আমরা এখন যে পেশ ( ُ ) দেখি তার জন্যে অক্ষরের বাম পাশে একটি নোকতা দেয়া হতো, যবরের ( َ ) জন্যে অক্ষরের উপরে একটি নোকতা দেয়া হতো, এবং যেরের ( ِ ) এর জন্যে অক্ষরের নিচে একটি নোকতা দেয়া হতো। এবং তানভীনের জন্যে দুটি করে নোকতা দেয়া হতো।

আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী কোর’আনের হরকত আবিষ্কার করে মারা যাবার পর, তাঁর ছাত্র নাসের বিন আসেম নোকতা আবিষ্কার করলেন। অর্থাৎ, “বা” (ب) এর নিচে এক নোকতা, “তা” (ت) এর উপর দুই নোকতা, চা (ث) এর উপর তিন নোকতা ইত্যাদি আবিষ্কার করলেন।

আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়ালী হরকতের জন্যে যে নোকতাগুলো ব্যবহার করেছিলেন, তার নাম ছিলো নাকতুল ইরাব ( نقط الإعراب)। আর, তাঁর ছাত্র নাসের বিন আসেম যে নোকতাগুলো আবিষ্কার করলেন, তার নাম দেয়া হলো নকতুল ইজাম (نقط الإعجام)।

কিন্তু, এবার সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো অন্যটি। হরকতের জন্যে আগ থেকেই নোকতা ব্যবহার করা হতো। এখন আবার বা (ب), তা (ت), চা (ث), ছীন (س), সীন (ش), নুন (ن), ইয়া (ي) ইত্যাদির অক্ষরের মধ্যে নোকতা দেয়ার কারণে অসংখ্য নোকতা হয়ে গেলো, এবং কোর’আন পড়তে কষ্ট হচ্ছিলো। তখন হরকতের জন্যে যে নোকতাগুলো ব্যবহার করা হতো, সেগুলোকে লাল রঙ করে দেয়া হলো।

কিন্তু এতেও মানুষ কোর’আন পড়তে কিছুটা কষ্ট বোধ করছিলো। তখন কিছুকাল পর খালিল ইবনু আহমদ আল ফারাহিদি নামক একজন ভাষাবিদ ‘নাকতুল ইরাব’ এর নোকতাগুলোকে পরিবর্তন করে যবর ( ُ ), যের ( َ ) ও পেশ ( ُ ), যজম ( ْ ), এবং আলিফের উপর হামজা ( أ ) আবিষ্কার করেন।

এভাবেই ছবিতে দেখানো কোর’আনটি আমাদের জন্যে একটি সহজ কোর’আনে পরিণত হয়েছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”