সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, কি এবং কেন?

ভালোবাসা দুই প্রকার।

১। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা।
২। আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা।


আল্লাহকে ভালোবাসা মানে আল্লাহর ইবাদাত করা এবং আল্লাহর হালাল-হারাম মেনে চলা।

আর, আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা মানে হলো, স্ত্রী, স্বামী, সন্তান, বাবা, মা, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে নিঃস্বার্থে ভালোবাসা।

দ্বিতীয় প্রকার ভালোবাসার সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন -

الحُبُّ فِي اللَّهِ وَالبُغْضُ فِي اللَّهِ مِنَ الإِيمَانِ

"আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যে ঘৃণা করাটা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।" [সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা]

অপর এক বর্ণনায় রাসূল (স) বলেন -

أفضل الأعمال الحب في الله، والبغض في الله

"সর্বোত্তম কাজ হলো আল্লাহর জন্যে কাউকে ভালোবাসা, এবং আল্লাহর জন্যে কাউকে ঘৃণা করা" [সুনানে আবু দাউদ, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং - ৪৫৯৯]

আল্লাহ জন্যে কাউকে ভালোবাসা মানে নিঃস্বার্থভাবে কাউকে ভালোবাসা, এবং আল্লাহর জন্যে কাউকে ঘৃণা করা মানে নিজের স্বার্থের কারণে কাউকে ঘৃণা না করা।

মানুষকে ভালোবাসার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (স) অন্য একটি হাদিসে বলেন -

لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ، ولا تؤمنوا حتى تحابوا أولا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم : أفشوا السلام بينكم

"একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমান আনয়ন করবে। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বলব, যা পালন করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো - তোমাদের মধ্যে সালামের বিস্তার ঘটাও।" [সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং - ৯৩]

উপরোক্ত হাদিসগুলো অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, মানুষকে কেবল আল্লাহর জন্যে অর্থাৎ নিঃস্বার্থভাবে ভালো না বাসলে প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না, এবং জান্নাতেও প্রবেশ করা যায় না।

অর্থাৎ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মাঝেই প্রকৃত শান্তি রয়েছে।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

হাতমোজা সমাচার

আমার আপু ইনবক্সে আমাকে একটা লেখা পাঠিয়েছেন। হাতমোজা নিয়ে অন্য একজনের লেখা । লেখার নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। ১। মুসলিমদের মহাসম্মেলনে অর্থাৎ হজ্জের সময়ে লাখো লাখো পুরুষের সামনে নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরেন না কেন? ২। নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরে যদি একেবারে ১০০% ঢেকে ফেলেন, তাহলে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত করতে বলা হয়েছে কেন? ৩। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নারীদের যা প্রকাশ্য থাকার তা ব্যতীত” তাদের বক্ষদেশ আভরণ করার জন্যে। কিন্তু হাতমোজা দিয়ে ১০০% ঢেকে ফেললে নারীদের আর প্রকাশ্য থাকে কি? ৪। রাসূল (স) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না”। কোনো নারী যদি হাতমোজা না পরতে চান, তাহলে তার জন্যে কঠিন কঠিন নিময় করার জন্যে কি রাসূল (স) বলেছেন? ৫। ঈমান ও তাকওয়া কি মানুষের হৃদয়ে থাকে না হাতে-পায়ে থাকে?