সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'বাঙালী' কি কারো মৌলিক পরিচয় হতে পারে?

"আমি কে? তুমি কে?
- বাঙালী, বাঙালী।"

এটি একটি শ্লোগান। বাঙালী সেক্যুলারগণ নিয়মিত এই শ্লোগান দিয়ে থাকেন। তাদের কথা হলো, "আমরা মুসলিম বা হিন্দু নই, আমাদের মৌলিক পরিচয় হলো আমরা বাঙালী"। সেক্যুলারগণ একটি নির্দিষ্ট ভাষার ভিত্তিতে নিজেদের পরিচয় প্রদান করেন। তারা মনে করেন, একটি নির্দিষ্ট ভাষাই হলো মানুষের মৌলিক পরিচয়।


কিন্তু, আসলে একটি নির্দিষ্ট ভাষা কখনো কোনো একজন মানুষের মৌলিক পরিচয় হতে পারে না। কারণ, একজন মানুষ অনেক ভাষায় সমানভাবে দক্ষ হতে পারে।

ধরুন, একজন মানুষ বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানে না, তখন আমরা তাঁকে বলি, "লোকটা মূর্খ বাঙালি"। কিন্তু, বাংলার সাথে সাথে কেউ যদি ইংরেজি ভাষায়ও কথা বলতে পারে, আমরা বলি, "লোকটা শিক্ষিত"। অথবা, কেউ যদি বাংলা ও ইংরেজির সাথে সাথে আরবি ভাষাটাও জানে, আমরা তাঁকে বলি, "লোকটা জ্ঞানী ও আলেম"। এভাবে একজন মানুষ যত বেশি ভাষা জানে, আমরা তাঁকে তত বড় 'জ্ঞানী' মনে করি।

এ কারণেই, কেউ যদি 'বাঙালি' পরিচয় দিয়ে নিজেকে কেবল একটি ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেন, তাহলে সেটি তার মূর্খতার পরিচয় বহন করে।

পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা কখনোই মানুষের মৌলিক কোনো পরিচয় ছিল না। বিভিন্ন ভাষার মানুষ একসময় তাঁদের জ্ঞান চর্চা করতো ল্যাটিন ভাষায়। ইসলাম আসার পর, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ তাঁদের জ্ঞান চর্চা করতেন আরবি ভাষায়। তারা কথা বলতেন আরবি ভাষায়, বই লিখতেন আরবি ভাষায়। এমনি প্রেমিকার কাছে চিঠিও লিখতেন আরবি ভাষায়, যদিও আরবি ভাষা প্রেমিক বা প্রেমিকা কারো মাতৃভাষা ছিলো না।

আমাদের বর্তমান সময়টাই দেখুন না...। আমরা তথাকথিত 'বাঙালিরা' ফেইসবুক চ্যাট থেকে শুরু করে একটি চাকরি বা বিয়ের সিভি পর্যন্ত দৈনন্দিন সবকিছুই ইংরেজি ভাষায় লিখি। তাহলে এখানে 'বাঙালী' হওয়াটা আমাদের মৌলিক পরিচয় হলো কিভাবে?

পৃথিবীর যে কোনো ভাষা অন্য একটি ভাষাকে গ্রহণ করে, কিন্তু পৃথিবীর যে কোনো ধর্ম অন্য একটি ধর্মকে গ্রহণ করে না। যে কোনো মানুষ ইচ্ছা করলে একসাথে অসংখ্য ভাষায় পারদর্শী হতে পারে, কিন্তু অনেকগুলো ধর্মকে একসাথে পালন করতে পারে না। একজন মানুষ বাঙালী ও ইংরেজ উভয়টি হওয়া সম্ভব। কিন্তু একজন মানুষ মুসলিম ও হিন্দু উভয়টি হওয়া সম্ভব না।

তাই,

একটি নির্দিষ্ট ভাষার ভিত্তিতে 'বাঙালী' হওয়াটা কখনোই একজন জ্ঞানী মানুষের মৌলিক পরিচয় হতে পারে না, এটি কেবল মূর্খ সেক্যুলারদের-ই মৌলিক পরিচয় হতে পারে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...