সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামী সংগঠনের ব্রাহ্মণ-শূদ্র

কল্পনা করুন,

কোনো দেশের একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন ইসলামের জন্যে কাজ করে। এই সংগঠনের সকল সদস্যের মান সমান নয়। সংগঠন তার সদস্যদেরকে চারটি স্তরে ভাগ করেছে। মনে করুন, চারটি স্তরের নাম যথাক্রমে ক, খ, গ, ঘ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।

‘ক’ গ্রুপের সদস্যরা বা ব্রাহ্মণ স্তরের লোকজন সংগঠনের সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। এরপর ‘খ’ গ্রুপ, তারপর ‘গ গ্রুপ। এবং সবচেয়ে কম সম্মানিত হলো ‘ঘ’ গ্রুপ বা শূদ্র স্তরের লোকজন।


ধরুন, ঐ সংগঠনের চারজন ছাত্র একটি রুমে থাকে। চারজন-ই ইসলামকে ভালোবাসে। কিন্তু সমস্যা হলো, ঐ রুমের তিনজন হলো ‘ক’ গ্রুপের সদস্য বা ব্রাহ্মণ এবং একজন হলো ‘ঘ’ গ্রুপের সদস্য বা শূদ্র।

‘ক’ গ্রুপের সদস্য বা ব্রাহ্মণেরা প্রতি মাসে একদিন একটি ইসলামী সভা করেন। কিন্তু সেখানে ‘ঘ’ গ্রুপের সদস্য বা শূদ্রদের থাকার কোনো অধিকার নেই। তাই, ঐ চারজনের কক্ষে যে একজন শূদ্র থাকে, তাকে বের করে দিয়ে বাকি ব্রাহ্মণেরা তাঁদের ইসলামী সভা পরিচালনা করেন।

অর্থাৎ, সংগঠনের সকল সদস্যের মান সমান নয়। তাই, সবাইকে সব ইসলামী সভায় রাখা সম্ভব নয়।
______

তুরস্কের ফেতুল্লাহ গুলেনের সংগঠন কাঠামোটা অনেকটা এমন। আমাদের দেশেও এমন কিছু ইসলামী সংগঠন আছে।

এটি নতুন নয়, এমন ঘটনা রাসূল (স)-এর যুগেও ঘটেছিল।

কিছু সম্মানিত মুমিন বান্দা এসে রাসূল (স)-কে বললেন, ‘আমরা নিম্ন বর্ণের মুমিনদের সাথে বসে আপনার সাথে মিটিং করতে পারব না। আমরা আপনার সাথে গোপনে মিটিং করতে চাই।’

রাসূল (স) তাঁদের প্রস্তাবে অসন্তুষ্ট হলেন। এবং আল্লাহও তাঁদের প্রস্তাবে অসন্তুষ্ট হলেন।

পরবর্তীতে আয়াত নাযিল হলো। কিছু শর্ত সাপেক্ষে আল্লাহ তায়ালা ঐসকল ‘উচ্চ বর্ণের’ মুমিনদেরকে রাসূল (স)-এর সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন। এবং তাঁদেরকে সংশোধন হবার সুযোগ দিয়েছিলেন।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نَـٰجَيْتُمُ ٱلرَّسُولَ فَقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىْ نَجْوَىٰكُمْ صَدَقَةًۭ ۚ ذَ‌ٰلِكَ خَيْرٌۭ لَّكُمْ وَأَطْهَرُ ۚ فَإِن لَّمْ تَجِدُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ

“হে মুমিনগণ! তোমরা রসূলের কাছে গোপনে কিছু বলতে চাইলে তৎপূর্বে সদকা প্রদান করবে। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার উপায়। যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা ৫৮/মুজাদালা – ১২]
______

ইসলাম একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ধর্মের নাম। সত্য প্রকাশ করাই ইসলামের উদ্দেশ্য। ইসলামের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে গোপনীয়তা সৃষ্টি করা মারাত্মক ভুল।

মনে রাখা প্রয়োজন,

কমিউনিস্টদের মত ইসলামী সংগঠনগুলো নিজেদের সদস্যদের মাঝে স্তরবিন্যাস সৃষ্টি করা নিজেদের জন্যেই ক্ষতির কারণ।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

হাতমোজা সমাচার

আমার আপু ইনবক্সে আমাকে একটা লেখা পাঠিয়েছেন। হাতমোজা নিয়ে অন্য একজনের লেখা । লেখার নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। ১। মুসলিমদের মহাসম্মেলনে অর্থাৎ হজ্জের সময়ে লাখো লাখো পুরুষের সামনে নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরেন না কেন? ২। নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরে যদি একেবারে ১০০% ঢেকে ফেলেন, তাহলে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত করতে বলা হয়েছে কেন? ৩। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নারীদের যা প্রকাশ্য থাকার তা ব্যতীত” তাদের বক্ষদেশ আভরণ করার জন্যে। কিন্তু হাতমোজা দিয়ে ১০০% ঢেকে ফেললে নারীদের আর প্রকাশ্য থাকে কি? ৪। রাসূল (স) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না”। কোনো নারী যদি হাতমোজা না পরতে চান, তাহলে তার জন্যে কঠিন কঠিন নিময় করার জন্যে কি রাসূল (স) বলেছেন? ৫। ঈমান ও তাকওয়া কি মানুষের হৃদয়ে থাকে না হাতে-পায়ে থাকে?