কেউ এসে পিথাগোরাসকে কোনো কিছু জিজ্ঞাস করলে, তিনি তা সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করতেন। যেমন, তিনি বলতেন, আল্লাহ হলো ‘এক’, অথবা, ‘এক’ হলো আল্লাহ।
পিথাগোরাস যদি রাসূল (স)-এর পরে জন্ম গ্রহণ করতেন, তাহলে সম্ভবত তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”কেও সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করে যেতেন।
কিন্তু তবুও, আমরা চাইলে এখন পিথাগোরাসের স্টাইলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”কে বোঝার চেষ্টা করেতে পারি।
_______
“লা ইলাহা, ইল্লাল্লাহ”-এ বাক্যে দুটি অংশ রয়েছে। “লা ইলাহা” অর্থ হলো “কোনো ইলাহ নেই”। এবং “ইল্লাল্লাহ” অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং পিথাগোরাসের কথা অনুযায়ী “লা ইলাহা” এর মান হলো [০] শূন্য। এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ এর মান [১] এক।
এখানে দেখুন, বাক্যটির প্রথম অংশের মান [০] শূন্য, এবং পরের অংশের মান [১] এক। সুতরাং সম্পূর্ণ বাক্যটির মান [০১] বা এক। কিন্তু বাক্যটির প্রথম অংশের মান যদি [১] হত, এবং পরবর্তী অংশের মান যদি [০] শূন্য হত, তাহলে সম্পূর্ণ বাক্যটির মান [১০] হয়ে যেত। আল্লাহ যেহেতু এক, তাই এ বাক্যের মান ১০ হয়ে গেলে বাক্যটি সংখ্যাগতভাবে শুদ্ধ ও সঠিক হত না। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পারছি, বাক্যটি সংখ্যাগতভাবে সম্পূর্ণ সঠিক।
সহজ কথায়, “লা ইলাহা, ইল্লাল্লাহ” না বলে আরবিতে যদি “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই” এভাবে বলা হত, তাহলে বাক্যটি সংখ্যাগতভাবে ভুল হয়ে যেত। কিন্তু “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাক্যটির গঠন কাঠামো একেবারেই সঠিক হয়েছে।
_______
নাস্তিকরা “লা ইলাহা” বলে কিন্তু “ইল্লাল্লাহ” বলে না। অর্থাৎ, তারা [০] শূন্যকে স্বীকার করলেও [১] এক’কে স্বীকার করে না।
সংখ্যার জগতে [০] শূন্য খুবই সমস্যাজনক একটি সংখ্যা। যেমন ধরুন, পাঁচের সাথে শূন্য গুণ করলে ফলাফল হয় [০] শূন্য। আবার, পাঁচ লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার পাঁচশ পঞ্চান্নের সাথে শূন্যকে গুণ করলেও ফলাফল হয় [০] শূন্য।
অর্থাৎ, ৫ × ০ = ০
এবং, ৫,৫৫,৫৫৫ × ০ = ০
দ্বিতীয়ত, কোনো সংখ্যাকে [০] শূন্য দ্বারা ভাগ করা যায় না।
অর্থাৎ, ৫ ÷ ০ = অ-সংজ্ঞায়িত
এবং, ৫,৫৫,৫৫৫ ÷ ০ = অ-সংজ্ঞায়িত
সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংখ্যা জগতে [০] শূন্য খুবই সমস্যাজনক একটি সংখ্যা। তেমনি, বাস্তব জগতেও আল্লাহকে অবিশ্বাস বা নাস্তিকতা খুবই সমস্যা জনক একটি বিষয়।
মাঝে মাঝে [১] একের গুরুত্ব বোঝার জন্যে শূন্যের প্রয়োজন হয়। তেমনি, আল্লাহ তায়ালার গুরুত্ব বোঝার জন্যেও সমাজে অল্পকিছু নাস্তিকদের প্রয়োজন হয়।
_______
এবার আসুন, ‘ইল্লাল্লাহ’ বা [১] ‘এক’ সংখ্যাটি দেখি। এক [১] দিয়ে যে কোনো সংখ্যাকেই গুণ করুন বা ভাগ করুন ফলাফল ঐ সংখ্যাটি-ই হবে।
অর্থাৎ, ৫ × ১ = ৫
এবং, ৫ ÷ ১ = ৫
এর মানে হলো, একজন মানুষের অন্তরের আল্লাহ তায়ালা উপস্থিত আছে কি নেই, তা ঐ মানুষটিকে দেখে বোঝা সম্ভব না। একজন ইমানদারকে দেখতে যেমন, একজন নাস্তিকেও দেখতে ঠিক একই রকম লাগে।
.
এক [১] এমন একটি সংখ্যা যাকে ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা কল্পনা করা যায় না। যেমন, দুই [২] মানে হলো দুইটা [১]-এর সমষ্টি। তিন [৩] মানে হলো তিনটি [১]-এর সমষ্টি। মানসম্পূর্ণ কোনো সংখ্যাই [১] একের সাহায্য ছাড়া কল্পনা করা যায় না। অর্থাৎ, মানসম্পূর্ণ সকল সংখ্যা [১] একের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু [১] এক কারো উপর নির্ভরশীল নয়।
একইভাবে, আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত কোনো কিছুই অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না। সবাই আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী, কিন্তু তিনি কারো প্রতি মুখাপেক্ষী নন।
_______
এবার আসুন, কেউ যদি আল্লাহর সাথে শিরক করে, অর্থাৎ, আল্লাহকে যদি [২] দুই, [৩] তিন বা ৩৩৩ টি হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে সমস্যা কি হবে?
দেখুন, কোনো সংখ্যাকে [১] ব্যতীত অন্য যে কোনো সংখ্যা দ্বারাই গুন বা ভাগ করা হোক না কেনো, ফলাফল কখনো এক হবে না।
যেমন, ৫ × ২ = ১০
এবং, ৫ ÷ ২ = ২.৫
অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে কেউ যদি শিরক করে, তাহলে সৃষ্টি জগতের সবকিছুর মাঝেই অমিল দেখা যেত। কিন্তু ফাইন টুনিং [Fine Tuning] –এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর ও সূক্ষ্মভাবে ভারসাম্যপূর্ণ।
সুতরাং, ‘আল্লাহ এক’ এ কথা স্বীকার করতেই হবে।
_______
পিথাগোরাস আজ যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-কে হয়তো আরো সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতেন।
যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
বল, তিনি আল্লাহ এক। [সূরা ১১২/ইখলাস – ১]