সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লাহর গুণবাচক নামের মাঝে "এবং" নেই

"বিসমিল্লাহ হির-রাহমানির রাহিম" – এ বাক্যটির অর্থ করার সময়ে আমরা বলি – “পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি”।

বাংলায় অনুবাদ করার সময়ে “পরম করুণাময় ‘ও’ পরম দয়ালু” দু’টি শব্দের মাঝে একটি [ও]–কে যুক্ত করি আমরা। কিন্তু কোর’আনে আল্লাহর একাধিক নাম একসাথে ব্যবহৃত হলে কখনোই [ও / এবং] যুক্ত হয় না।

যেমন ধরুন, আল্লাহ বলছেন –


إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ

“নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময় ‘ও’ প্রজ্ঞাবান”। [২/৩২]

এখানে, ٱلْعَلِيمُ ও ٱلْحَكِيمُ শব্দের মধ্যে আরবি ‘ওয়াও’ বা ‘এবং’ শব্দটি নেই। কিন্তু আমরা অনুবাদের সময়ে ‘ও’/ ‘এবং’ শব্দটিকে ব্যবহার করি।

তাহলে এটি কি ভুল অনুবাদ?

উত্তর – না।

বাংলা ভাষায় আমরা একাধিক বিশেষণ বা গুণবাচক শব্দ ব্যবহার করার সময়ে মাঝখানে [ও] শব্দটি যুক্ত করি।

যেমন, আমরা বলি – “ছেলেটি মেধাবী ও চরিত্রবান”। এখানে ‘মেধাবী’ [ও] ‘চরিত্রবান’ দুটি শব্দের মাঝে ‘ও’/’এবং’ শব্দটিকে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই যুক্ত করি।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর গুণবাচক নামের মাঝখানে কখনোই [ও] বা [এবং] শব্দটি যুক্ত করেন না।

যেমন এই আয়াতটি দেখুন –

هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَـٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَـٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রমশালী, প্রবল, মহিমান্বিত। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র।” [৫৯/২৩]

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের ৮ টি গুণবাচক নাম ব্যবহার করেছেন। কিন্তু, একবারেও [ و ]/ ‘ওয়াও’/ ‘ও’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।

প্রশ্ন হলো, কেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর গুণবাচক নামের মাঝখানে ‘ও’ শব্দটি ব্যবহার করেন না?

উত্তর হলো – আল্লাহ তায়ালা এক [ও] অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর নামের মধ্যখানে [ و ] অক্ষরটি বসিয়ে তাঁর নামগুলোকে পৃথক করতে চান না।

অর্থাৎ, হিন্দু ধর্মের মত, জ্ঞানের দেবী একজন, আর দয়ার দেবী অন্যজন, এমনটা ইসলামে নেই। আল্লাহ যেমন দয়ালু, তেমন জ্ঞানী। তিনি তাঁর গুণবাচক নামগুলোর মাঝে [ও] শব্দটি দিয়ে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করতে চান না।

তাই, কোর’আনে আল্লাহ তায়ালার যত গুণবাচক নাম ব্যবহৃত হয়েছে, কখনোই মাঝখানে [ও] শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...