সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জ্ঞানে ও বিজ্ঞানে সেরা হবার আর্থ-সামাজিক কারণ

জ্ঞানে ও বিজ্ঞানে মুসলিম সমাজ এক সময় বিশ্বসেরা ছিল – এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু, একটি সমাজে এমনি এমনি-ই জ্ঞানে ও বিজ্ঞানে বিশ্বসেরা হতে পারে না। এর পিছনে অনেকগুলো আর্থ-সামাজিক কারণ থাকে।

যেমন,

সে সময়ের মুসলিমরা ছিলেন ধর্মের প্রতি অনুগত এবং চিন্তার ক্ষেত্রে মুক্তমনা। আমাদের দেশে যেমন সেকুলার শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা আলাদা আলাদা, তখন এমনটা ছিল না। তখনকার ধার্মিকরা ছিলেন অনেক বেশি মুক্তমনা।
..
মতের ভিন্নতাকে তখন সুন্দরভাবে গ্রহণ করা হত। কেউ নিজের জ্ঞানকে একমাত্র সহি জ্ঞান মনে করতেন না। যেমন, ক্লাসিক্যাল তাফসীরগুলোতে আমরা দেখি, লেখক নিজের মতের সম্পূর্ণ বিপরীত মতটি তাঁর তাফসীরে তুলে দিচ্ছেন। এবং বলছেন, কোন মতটি সঠিক তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।





মুসলিমরা তখন তাদের ইবাদাতসমূহ সহজভাবে পালন করার জন্যে বিভিন্ন প্রকার বস্তু ও কৌশল আবিষ্কার করতেন। যেমন, আল খাওয়ারিজমী কাবা শরীফের সঠিক দিক নির্ণয়ের জন্যে যে নিয়মগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, পরবর্তীতে সেগুলো থেকেই জ্যামিতি শাস্ত্রের উদ্ভব হয়।



সমাজের সাধারণ মানুষ তখন ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানকে আলাদা করে দেখতেন না। এবং বিজ্ঞানীদেরকে কেউ তখন নাস্তিক মনে করতেন না। যিনি যত বড় জ্ঞানী বা বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি তত বড় ধার্মিক ছিলেন। এবং, যিনি যত বড় ধার্মিক ছিলেন, তিনি তত বড় জ্ঞানী বা বিজ্ঞানী ছিলেন। যেমন, ইমাম আবু হামিদ আল গাজালির কথা আমরা বলতে পারি।



মুসলিমরা তখন পৃথিবীর সব ধরণের জ্ঞানকে নিজের মনে করতেন। অর্থাৎ, এটি আমাদের জ্ঞান, সেটি ওদের জ্ঞান, এভাবে জ্ঞানকে বিভক্ত করতেন না। যেমন, তাঁরা তখন গ্রীকদের থেকে দর্শন ও ইন্ডিয়া থেকে গণিত শিখেছিলেন। এবং চীন থেকে মুদ্রণযন্ত্র এনে ব্যবহার করেছিলেন।



জ্ঞান ও বিজ্ঞানের জন্যে তৎকালীন সরকার এবং সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষেরা প্রচুর অর্থ-সম্পদের যোগান দিতেন। জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদেরকে সাধারণ মানুষ তাদের জায়গা-জমি ওয়াকফ করে দিতেন। ফলে, জ্ঞানীরা খুব বেশি জীবিকার চিন্তা করতে হতো না, তারা নিরিবিলি তাঁদের গবেষণা করতে পারতেন।
_______

সর্বোপরি, মুসলিমরা তখন কোর’আনকে মনে করতেন বিশ্বজগতের লিখিত রূপ। এবং বিশ্বজগতকে মনে করতেন কোর’আনের বাস্তব রূপ। অর্থাৎ, কোর’আনের আয়াত ও বিশ্বজগতের আয়াতের মাঝে তাঁরা তখন কোনো পার্থক্য করতেন না।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...