সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেন এত দুর্নীতি?

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও দেশের সর্বত্র এত দুর্নীতি কেন?

একটি জরিপের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।

মানুষের মূল্যবোধ জরিপ করে বিশ্বের যেসব সংগঠন, তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ একটি সগঠনের নাম হলো World Values Survey । বাংলাদেশকে নিয়ে তারা একটি জরিপ করেছিল অনেক আগে, কমেন্টে জরিপের মূল লিঙ্কটি দিয়ে দিয়েছি। ঐ জরিপটি থেকে এখানে দুটি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছি।


: আপনি কি আল্লাহ বা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন?

এর জবাবে, ৯৯.১% মানুষ বলেছে ‘হ্যাঁ’। ০.৫% মানুষ বলেছে ‘না’, এবং ০.৪% মানুষ বলেছে ‘জানি না’।

উত্তরটি দেখে আমরা হয়তো খুব খুশী হয়েছি। মনে হচ্ছে, নাস্তিক মুক্ত এক বাংলাদেশ দেখছি। তো চলুন, এবার অন্য একটি প্রশ্ন দেখি।

: আপনি কি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করেন?

এর জবাবে, মাত্র ৫৩.৮% মানুষ বলেছে ‘হ্যাঁ’। বাকি ৪২.৩% মানুষ বলেছে ‘না’, এবং ৩.৯% মানুষ বলেছে ‘জানি না’।

কি বুঝলেন?

আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যতটা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, ঠিক ততটা আখিরাতকে বিশ্বাস করে না। অথচ, আল্লাহকে বিশ্বাস করা যেমন মুসলিম হওয়ার জন্যে শর্ত, তেমনি আখিরাতকে বিশ্বাস করাও শর্ত।
________

এবার দুর্নীতির হিসাবটা মিলানো একেবারে সহজ হয়ে গেল।

কেন আমাদের ভ্যাট ও করের টাকায় সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়? কেন সরকারী অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ-ই হয় না? কেন এত মিথ্যা মামলা, হত্যা, গুম ও ধর্ষণ? কেন এত অন্যায়, জুলুম ও অবিচার? কেন এত ছিনতাই, ব্যাংক চুরি, টাকা চুরি, মসজিদের জুতা চুরি, ফেইসবুকের লেখা চুরি?

কারণ একটাই। আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা আখিরাতকে বিশ্বাস করি না।

উন্নত দেশের মত আমাদের দেশের সর্বত্র সিসি ক্যামেরা নেই। আমাদের আইন ও বিচার নেই। তাই, আখিরাতের বিচারকে বিশ্বাস না করলে আমাদের দেশের দুর্নীতি কোনো ভাবেই কমা সম্ভব না।

কিন্তু, বাংলাদেশের অনেক মানুষ আখিরাতকে বিশ্বাস করে না। কেউ কেউ আখিরাতকে বিশ্বাস করলেও তার বিশ্বাসের মাত্রা খুবই নিম্নমানের। আমি নিজেকে নিজে বিচার করে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করেছি।

একজন মানুষ সত্যিই যদি আখিরাতকে বিশ্বাস করে, তাহলে তার দ্বারা কোনো দুর্নীতি করা সম্ভব না।
________

ও… একটি কথা বলতে ভুলে গেছি। সময় থাকলে কমেন্টে দেয়া জরিপটি দেখতে পারেন। বাংলাদেশী মানুষদের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় খুঁজে পাবেন।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...