সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদম (আ) কি পৃথিবীর প্রথম মানব ছিলেন?

আল কোর’আনে কমপক্ষে চারটি স্থানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা ‘একটি নফস’ থেকে সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, ‘আল্লাহ তায়ালা আদম (আ) থেকে সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন’ – এ কথা কোর’আনে কোথাও বলা হয়নি। [সূত্র ৪: ১, ৬: ৯৮, ৭: ১৮৯, ৩৯: ৬]

অনেকে বলেন, কোর’আনে বর্ণিত ‘একটি নফস’ দ্বারা আদম (আ)-কেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু, ‘একটি নফস’ দ্বারা আমরা যদি আদম (আ) কল্পনা করি, তাহলে এটি কোর’আনের অসংখ্য আয়াতের সাথে বৈপরীত্য তৈরি করে।

________
বৈপরীত্য – ১ । একটি নফস থেকে সৃষ্ট প্রথম মানুষের শিরক।
________
কোর’আনের বর্ণনা মতে, ‘একটি নফস’ থেকে সৃষ্ট প্রথম মানুষ ও তার সঙ্গিনীকে আল্লাহ তায়ালা যখন সন্তান দান করলেন, তখন তারা আল্লাহর সাথে শিরক করতে শুরু করলো। [সূত্র ৭: ১৮৯-১৯০]

এখানে ‘একটি নফস’ হিসাবে যদি আদম (আ)-কে ধারণা করে নেয়া হয়, তাহলে আদম (আ)-এর উপর শিরকের মত একটি জঘন্য অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করা হবে। কেননা নবী-রসূলগণ ছোট-খাট কিছু ভুল করলেও শিরকের মত জঘন্য অপরাধ কখনোই করতে পারেন না।

আদম (আ) ও তাঁর সঙ্গিনী উভয়ের সন্তান-সন্ততি জন্ম লাভ করার পূর্বে, শয়তানের প্ররোচনায় তারা একটি ছোট্ট ভুল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সাথেসাথে তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, এবং আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

আদম (আ)-এর ভুলটিকে কোর’আনে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হলেও কোথাও বলা হয়নি যে এটি ছিল শিরক। এবং এ ভুলটি ছিল তাদের সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পূর্বে। সুতরাং,‘একটি নফস’ থেকে সৃষ্ট প্রথম মানুষের শিরক এবং আদম (আ)-এর ভুলকে কোনো ভাবেই এক করে ফেলা যায় না।

যেহেতু কোনো নবী-রাসূল-ই কখনো শিরক করতে পারেন না, তাই ‘প্রথম নফস’ হিসাবে আদম (আ)-কে চিন্তাই করা যায় না। কেউ যদি ‘একটি নফস’ এর স্থানে আদম (আ)-কে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে কোর’আনের অনেকগুলো আয়াতের মাঝে বিশাল বৈপরীত্য সৃষ্টি হবে।

________
বৈপরীত্য – ২ । নবী হিসাবে নির্বাচন।
________
আদম (আ)-কে যদি পৃথিবীর প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে নিম্নক্ত আয়াতগুলোর সাথে বৈপরীত্য তৈরি হবে।

এক।

وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ

“আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম, এরপর তোমাদের আকৃতি তৈরি করলাম। তারপর, আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, “তোমরা আদমকে সেজদা কর”। তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না”। [ সূরা ৭/আরাফ – ১১]

এ আয়াতে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম অনেক মানুষ তৈরি করেছেন। তারপরে তাদেরকে একটি সুন্দর আকৃতি দান করেছেন। তারপর ঐ সকল মানুষদের মধ্য থেকে আদম (আ)-কে প্রথম নবী হিসাবে নির্বাচিত করেছেন, এবং ফেরেশতাদেরকে সেজদা করতে বলেছেন।

যদি আদম (আ)-কে পৃথিবীর প্রথম সৃষ্ট মানুষ হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে এ আয়াতটির ক্রমবিন্যাস ভেঙ্গে যাবে যাবে।

দুই।

إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদমকে, নূহকে, ͠ও ইব্রাহীমের বংশধরকে এবং ইমরানের বংশধরকে নির্বাচিত করেছেন”। [ সূরা ৩/আলে ইমরান – ৩৩]

এ আয়াতে দেখা যায়, আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ), ইব্রাহীম (আ), ইমরান (আ) -এর মতই কোনো একটি সমাজের জন্যে একজন নবী হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু আদম (আ) যদি পৃথিবীর প্রথম মানব-ই হতেন, তাহলে তাঁকে অন্যান্য নবীদের মত নির্বাচন করার প্রয়োজন ছিল না।

তিন।

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ

“সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা নবীদেরকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে পাঠালেন। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে তারা মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। [ সূরা ২/বাকারা – ২১৩]

উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা আগে অনেক মানুষ তৈরি করেছেন, তারপর তাদের হেদায়েতের জন্যে নবী-রাসূলদেরকে কিতাব সহ পাঠিয়েছেন।

যদি আদম (আ)-কে পৃথিবীর প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে উপরোক্ত আয়াতগুলো মত কোর’আনের অসংখ্য আয়াতের সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু আদম (আ)-কে যদি পৃথিবীর অন্য মানুষদের উপর খেলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম মানুষ বা প্রথম নবী হিসাবে গণ্য করা হয়, তাহলে কোর’আনের মাঝে আর কোনো বৈপরীত্য থাকে না।
________
বৈপরীত্য – ৩ । ফেরেশতাদের অদৃশ্য জ্ঞান।
________
কোর’আনের অনেক স্থানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান অন্য কাউকে দেন না। কিন্তু, ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তায়ালা যখন বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করব, তখন ফেরেশতারা বললেন, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে খলিফা বানাবেন যারা দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত ঘটায়?”

প্রশ্ন হলো, ফেরেশতারা আগ থেকেই কিভাবে জানে যে, মানুষেরা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত ঘটায়?

উত্তর হলো, আদম (আ)-এর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে অনেক মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। তারা শিরক করত এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করত। তাদেরকে দেখেই ফেরেশতারা এ কথা বলেছিলেন।

কিন্তু এখন যদি আদম (আ)-কে প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ফেরেশতারা গায়েব জানে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না।

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا

“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। আর, তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না”। [সূরা ৭২/জিন্ন – ২৬]

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَـٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌۭ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةًۭ ۖ قَالُوٓا۟ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

“যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদিগকে বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে খলিফা বানাবে যারা দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত ঘটায়? আমরা-ই তো তোমার গুণকীর্তন করছি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহ বললেন, নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না”। [সূরা ২/বাকারা – ৩০]

এ আয়াত দুটি অনুযায়ী বলা যায়, আদম (আ) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি বা প্রথম নবী। কিন্তু তাঁকে পৃথিবীর প্রথম মানব হিসাবে চিন্তা করলে উপরোক্ত আয়াত দুটির মাঝে বৈপরীত্য তৈরি হয়।
________
বৈপরীত্য – ৪ । ভাই-বোনের বিয়ে নামক মিথ্যা গল্প।
________
আদম (আ)-কে যদি প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করা হয়, তাহলে কোর’আন হাদিসের বাইরে একটি আজগুবি গল্প তৈরি করতে হয়। গল্পটি হলো, আদম (আ)-এর ছেলে মেয়েরা একে অপরকে বিয়ে করতো। অর্থাৎ, আদম (আ)-এর সময়ে ভাইয়ের সাথে বোনের বিয়ে হত। কিন্তু এই ধরণের গল্প কোর’আনে বা হাদিসে কোথাও নেই।

কোর’আনের সূরা নিসার ২৩ নং আয়াত অনুযায়ী আমরা সবাই জানি, আল্লাহ তায়ালা ভাই-বোনের মাঝে বিয়েকে হারাম করেছেন। কিন্তু আদম (আ)-কে প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করলে, এমন একটি মিথ্যা গল্প নির্মাণ করতে হয়, যা ইসলামের কোথাও নেই।

________
বৈপরীত্য – ৫ । ঈসা (আ)-এর মতই আদম (আ)।
________
কোর’আনে বলা হয়েছে, ঈসা (আ)-এর জন্ম হলো আদম (আ)-এর মতই। ঈসা (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, আদম (আ)-কেও আল্লাহ তায়ালা রূহ ফুঁকে দিয়েছেন [১৯: ১৭]। ঈসা (আ)-কে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আদম (আ)-কেও সে পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ থেকে বলা যায়, ঈসা (আ) যদি মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আদম (আ)-ও মায়ের পেটে জন্ম গ্রহণ করেছেন।

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

“আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই ঈসার উদাহরণ হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন ‘হও’, তারপর তিনি হলেন”। [সূরা ৩/আলে ইমরান – ৫৯]

কেবল আদম (আ) নয়, কোর’আনের বর্ণনা অনুযায়ী, আমরা সবাই আদম (আ)-এর মত একই পদ্ধতিতে মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছি।

পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তি-ই এককভাবে আদম (আ) এর মত মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন,

قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا

“এক ব্যক্তির সঙ্গী কথা প্রসঙ্গে তাকে বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে? [সূরা ১৮/কাহফ – ৩৭]

সামষ্টিকভাবে পৃথিবীর সকল মানুষ আদম (আ)-এর মত মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ إِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ

“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ হয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। [সূরা ৩০/রূম – ২০]

আদম (আ) ও ঈসা (আ)-এর মত সব মানুষকেই আল্লাহ তায়ালা রূহ ফুঁকে দিয়েছেন।
ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

“অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ দান করেন। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [সূরা ৩২/সাজদা – ৯]

উপরোক্ত আয়াতগুলোর আলোকে বলা যায়, আল্লাহ তায়ালা আদম (আ)-কে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আমাদেরকেও সেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আদম (আ)-কে যেভাবে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলেন, আমাদেরকে সেভাবে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলেন। পার্থক্য হলো, আল্লাহ তায়ালা আদম (আ) ও ঈসা (আ)-এর নিকট ওহী পাঠিয়েছেন, কিন্তু আমাদের নিকট ওহী পাঠান নি। তাই কোর’আনে ঈসা (আ)-এর জন্মকে আদম (আ)-এর মতই উল্লেখ করা হয়েছে।

কোর’আন অনুযায়ী, ঈসা (আ)-এর জন্ম যদি আদম (আ)-এর মতই হয়ে থাকে, তাহলে বলা যায় যে, ঈসা (আ)-কে তাঁর মা মরিয়ম (আ) যেমন গর্ভধারণ করেছিলেন, আদম (আ)-কেও তাঁর মা গর্ব ধারণ করেছিলেন। কিন্তু কেউ যদি আদম (আ)-কে প্রথম মানব হিসাবে কল্পনা করে, তাহলে এ কথা বলা যাবে না যে, ঈসা (আ)-এর জন্ম আদম (আ)-এর মতই।
________ -- ________

অনেকে বলেন, আদম (আ) যদি প্রথম মানুষ না হন, তাহলে মানবজাতিকে বনি-আদম বা আদমের সন্তান বলা হয় কেন?

কোর’আনে কেবল ‘বনি-আদম’ বলা হয়নি, ‘বনি-ইসরাইল’ নামে একটি সূরাও রয়েছে। ‘বনি-আদম’ মানে যেমন আদম (আ)-এর সন্তান, তেমনি ‘বনি-ইসরাইল’ মানে ইয়াকুব (আ)-এর সন্তান। এখানে পার্থক্য হলো, ‘বনি-আদম’ বললে আদম (আ) পরবর্তী সকল মানুষকে বুঝায়, এবং বনি-ইসরাইল বললে ইয়াকুব (আ)-এর পরবর্তী সকল মানুষকে বুঝায়। এছাড়া, ইব্রাহীম (আ)-কে বলা হয়েছে মুসলিম জাতির পিতা। মুহাম্মদ (স)-এর স্ত্রীদেরকে বলা হয়েছে মুমিনদের মাতা।

বনি-আদম বলা মানে এই নয় যে, আদম (আ) পৃথিবীর প্রথম মানুষ। বরং, আদম (আ) ও অন্যান্য নবীদের উম্মতদেরকে বুঝানোর জন্যে কোর’আনে ‘পিতা-পুত্র’ সম্পর্কটি ব্যবহার করা হয়।
___________
সুতরাং আমরা বলতে পারি, আদম (আ) পূর্বে পৃথিবীতে অনেক মানুষ ছিল, যারা শিরক করতো, দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করতো এবং রক্তপাত করতো। তারপর, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে তাঁর খলিফা হিসাবে এবং প্রথম নবী হিসাবে আদম (আ)-কে নির্বাচিত করেন।

আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত করার মাধ্যমে পৃথিবীতে তাঁর পরবর্তী সকল মানুষ সম্মান লাভ করেছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”