সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রমাণ

যে কোনো কিছু সর্বপ্রথম ধর্মের আলোচ্য বিষয় হিসাবে থাকে, এরপর সেটি হয় দর্শনের আলোচ্য বিষয়, এবং সর্বশেষ সেটি হয় বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

যেমন, মৃত্যু পরবর্তী জীবন বা আখিরাত।

মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে সর্বপ্রথম বিভিন্ন ধর্মে আলোচনা করা হয়। এরপর, বিভিন্ন দার্শনিক মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বাস্তবতা নিয়ে যুক্তি দিতে শুরু করেন। আর এখন, বিজ্ঞান মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে প্রমাণ দিতে শুরু করলো।


উদাহরণ স্বরূপ বিজ্ঞানী Jeffrey Long এর “Evidence of the afterlife” বইটির কথা উল্লেখ করা যাক। এ বইটি লেখার আগে তিনি একটি গবেষণা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম – “Near death experiences research foundation”। সংগঠনটির ওয়েব সাইট হলো – http://www.nderf.org

প্রায় ২৫ বছর থেকে ‘মৃত্যু পরবর্তী জীবন’ নিয়ে তারা গবেষণা করছেন। তাদের গবেষণার পদ্ধতিটা এবার একটু বোঝার চেষ্টা করি।

কোনো এক্সিডেন্ট বা হার্ট অ্যাটাকের পর মানুষের হার্ট ও ব্রেইন উভয়টি যখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তখন ডাক্তারগণ তাকে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ বা মৃত বলে ঘোষণা করে। কিন্তু, আল্লাহর ইচ্ছায় এরপরও কিছু কিছু মানুষ তাদের জীবন ফিরে পায়।

যেসব মানুষ এভাবে মৃত্যুর একেবারে নিকটে গিয়ে আবার জীবন ফিরে পায়, তাদের নিয়ে গবেষণা করে এ সংগঠনটি। বিশ্বের যেখানে যেখানে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, সেসব জায়গা থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের অভিজ্ঞতা তারা তাদের ওয়েবসাইটে শেয়ার করেছে। এসব তথ্যগুলোকে বিভিন্নভাবে গবেষণা করে ডাক্তার জাফরি লং একটি বই লিখেছেন, যার নাম – ‘পরকালের প্রমাণ’ বা ‘Evidence of the afterlife’।

এখানে ডাক্তার জেফরি লং এর গবেষণাটির মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।

১। মানুষ তার শরীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষ যখন ক্লিনিক্যাল ডেথ হয়ে যায়, তখন তার হার্ট ও ব্রেইন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও সে সবকিছু দেখতে পারে ও বুঝতে পারে।
২। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের এবং বিভিন্ন বয়সের মানুষ ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ এর সময়ে যে অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করে, তা সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই হয়ে থাকে।

৩। ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ এর সময়ে মানুষ যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তা স্বপ্ন দেখার মত নয়। আশেপাশের মানুষগুলো তখন কে কি কথা বলছে এবং কে কি করছে, সবকিছু তারা বাস্তবিকভাবে দেখতে ও শুনতে পায়। পরবর্তীতে তারা ঐসব ঘটনা হুবহু বর্ণনা করতে পারে।

৪। ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ এর সময়ে মানুষ বিশ্ব অস্তিত্বের সাথে এক হয়ে যায়। ফলে বাধাহীনভাবে সর্বত্র চলাফেরা করার একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো তারা ইচ্ছা করে শরীরে ফিরে আসে, আবার কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে শরীরে ফিরে আসতে হয়।

৫। এ সময়ে তারা একটি আলো দেখতে পারে এবং জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ জীবনটাকে একসাথে দেখতে পারে।
_________

মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী এখন গবেষণা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েক জন হলেন – Dr. Sam Parnia, Dr. Jeffrey Long, Dr. Mary Neal, Dr. Kevin Nelson, Dr. Peter Fenwick, Dr. Mario Beauregard

এ নিয়ে যারা বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, অথবা যারা আখিরাতকে বিশ্বাস করেন না, তাদের জন্যে কমেন্টে কিছু পিয়ার রিভিউড জার্নাল, স্কলারলি জার্নাল, এবং ভিডিও শেয়ার করছি। দেখুন এবং উপলব্ধি করুন।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...