সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মা দিবস ও কিছু কথা

ছোট বেলায় কোনো দুষ্টুমি করলে, দাদী ডাক দিয়ে বলতেন – “খবরদার! তোর দাদা দেখলে কিন্তু বকা দিবে!”

অথবা, আম্মু বলতেন, - “সাবধান! তোর আব্বু দেখলে কিন্তু খবর আছে!”

আমাদের দাদীরা সবসময় দাদাদের ভয় দেখাতেন, আর মায়েরা সবসময় বাবাদের ভয় দেখাতেন।

কিন্তু, বর্তমানে শিশুদেরকে এখন আর বাবা-দাদাদেরর ভয় দেখানো হয় না। তাদেরকে বরং কাল্পনিক ভুত, বাঘ, ভল্লুক, সিংহ, পেঁচা এসবের ভয় দেখানো হয়।

তাতে ক্ষতি কি হয়?

১। শিশুরা তাদের বাবা-মাকে শ্রদ্ধা ও ভয় করতে শিখে না।
২। শিশুরা বাবাকে ভালো মনে করে, কিন্তু মাকে হিংস্র মনে করে।
৩। শিশুরা মনে করে তাদের মা মিথ্যা কথা বলে। কারণ, শিশুরা অন্যায় করে ফেললেও বাঘ ও ভল্লুক কখনো তাদেরকে খেতে আসে না।

প্রশ্ন হলো, আধুনিক নারীরা শিশুদেরকে পুরুষদের ভয় না দেখিয়ে বাঘ-ভল্লুকের ভয় দেখায় কেন?

নারীবাদীরা ভাবেন, আমি যদি বাচ্চাকে তার বাবার ভয় দেখাই, তার মানে হলো, ‘বাচ্চার বাবার চেয়ে আমার গুরুত্ব কম’। তাই তারা সন্তানের সামনে তাদের বাবাকে ততটা গুরুত্ব দেন না, এবং তাদেরকে তাদের বাবার ভয় না দেখিয়ে বাঘ-ভল্লুকের ভয় দেখান।

দেখুন,

পৃথিবীতে কোনো সন্তান জন্ম লাভ করার ক্ষেত্রে বাবার অবদান ১% হলে মায়ের অবদান ৯৯%। ফলে, শিশুরা তার বাবা থেকে যদি ১০% শিখে, তাহলে তার মায়ের কাছ থেকে শিখে ৯০%।

কোনো পরিবারের পুরুষ যদি নারীকে গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে ১০% গুরুত্ব প্রদান করতে শিখবে। কিন্তু সেই পরিবারের নারী যদি পুরুষকে গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে তাদের সন্তানেরা বাবা-মাকে ৯০% গুরুত্ব প্রদান করতে শিখবে। যদি নারী ও পুরুষ উভয়ে উভয়কে শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে ১০০% শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করবে। যদি কেউ কাউকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান না করে, তাহলে তাদের সন্তানেরা বাবা-মাকে ০.০০% শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্বও প্রদান করবে না।

আমরা প্রায়ই বলি, আজকাল সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করেন না। দেখুন, বাবা-মা যদি বাকশক্তিহীন হয়, তাহলে তাদের সন্তানেরাও বোবা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বাবা ও মা যদি পরস্পরকে শ্রদ্ধা না করে, পরস্পরকে সম্মান ও গুরুত্ব না দেয়, তাহলে সন্তানেরা বাবা-মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান, গুরুত্ব প্রদান করতে শিখবে কোত্থেকে?

আমার এক নারী আত্মীয়া আছেন। তিনি তাঁর পুরুষ সঙ্গীকে [ধরুন] “রহিম” নাম ধরে ডাকে। তাদের ছেলে হওয়ার পর ঐ ছেলেও তার বাবাকে “রহিম” নামে ডাকতে শুরু করলো। প্রথম প্রথম আমাদের সবার কাছেই শুনতে ভালো লাগত। কিন্তু বড় হওয়ার পর আজো সেই ছেলে তার বাবাকে “বাবা” বা “আব্বু” বলে ডাকছে না। ফলে, বাবা ও ছেলের মাঝে একটি অনিবার্য দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।

সন্তান তার মায়ের কাছ থেকেই সবকিছু শিখে। মা যদি সন্তানের বাবাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন, তাহলে সন্তান বাবা-মা উভয়কে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে শিখে।

তো,

আম্মু যখন আমাদেরকে আব্বুর ভয় দেখাতেন, তখন আব্বুকে কিছুটা কঠোর মনে হলেও, আম্মুকে খুবই দয়ালু মনে হত। আব্বু কখনো মারতে শুরু করলে আম্মু এসে বলতেন, “যথেষ্ট হয়েছে, আর মারার দরকার নেই”। দাদী এসে আব্বুকে বকা দিতেন।

–এই যে বাবাদের কঠোরতার বিপরীতে মায়েদের ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন, এতে সন্তানদের আচরণে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। কিন্তু কোনো সংসারে মা যদি বাবার চেয়ে বেশি কঠোর হন, তাহলে সন্তানেরা মায়েদেরকে ভালোবাসার পরিবর্তে ভয় করতে শুরু করে, এবং আস্তে আস্তে মায়েদের থেকে দূরে সরে যায়।

কোনো পরিবারে মায়ের কঠোরতা বা কর্তৃত্ব বেশি থাকলে, সন্তানেরা মায়েদের থেকে যে ৯০% শেখার কথা ছিল, তা আর ভালোভাবে শিখতে পারে না। ফলে সে পরিবারের সন্তানেরা অপূর্ণ ও অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে। বাবার ভয় ও মায়ের ভালোবাসা যদি কোনো সন্তান উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে সে পরিবারে অনিবার্যভাবে অসংখ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে।

যেমন,

নারীরা যদি সন্তানদেরকে পুরুষদের ভয় না দেখান, তাহলে শাসন করার জন্যে তাদের নিজেদেরকেই কঠোর হতে হয়। কিন্তু, নারীরা যখন কঠোর হয়, তখন তাদের সন্তানেরা নিজের অজান্তেই তাদের মাকে ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা করতে শুরু করে। কারণ, শিশুদের মনে ভয় ও ভালোবাসা একসাথে থাকে না।

এ কারণেই, পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ সন্তানেরা তাদের বাবা-মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও গুরুত্ব প্রদান করে না। তারা বাবা-মাকে ভালোবাসার জন্যে বছরে একদিন “মা দিবস” ও একদিন “বাবা দিবস” চালু করেছে।

এই যে ১৪ মে নাকি “মা দিবস”।

আমার কাছে বছরের ৩৬৫ দিন-ই মা দিবস। বিশ্বের যেখানে বা যে অবস্থায় থাকি না কেন, বছরের ৩৬৫ দিন-ই আম্মুর সাথে কথা বলি, আলহামদুলিল্লাহ। এর কারণ হলো, আমাদের পরিবারে কোনো নারীবাদ ছিল না, ছিল – “আব্বুর ভয় ও আম্মুর ভালোবাসা”।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...