সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামে নারী ও পুরুষ

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত এবং সূরা নিসার ১১, ৩৪, ১৭৬ নং আয়াতে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য করা হয়েছে।

দেখুন, কোর’আনের যতগুলো আয়াতে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য রয়েছে বলে দাবী করা হয়, সবগুলো আয়াত-ই সম্পদ সম্পর্কিত।

সুতরাং, ইসলামে সম্পদের ধারণা কি তা ভালোভাবে না বুঝলে এই আয়াতগুলোর অর্থ বোঝা মুশকিল।

পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা পৃথিবীতে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীকে যে যতটুকু দখল করতে পারে, সে ততবড় ধনী। আর যে পৃথিবীকে দখল করতে পারে না, সে গরিব। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরা পৃথিবীকে কখনো স্থায়ীভাবে ভাগাভাগি করে না। ফলে তাদের মাঝে কেউ ধনী বা কেউ গরিব নেই।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বলেছেন পাখীদের থেকে শিক্ষা নিতে। রাসূল (স) পাখিদের মত রিজিকের সন্ধান করতে বলেছেন। কারণ, পাখিরা পৃথিবীকে দখল করে রাখে না, এবং পৃথিবীতে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে না। পাখীরা সকালে খালি পেটে বের হয়, এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। মানুষ যদি পৃথিবীতে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা না করে, পাখিদের মত কেবল আল্লাহর উপর-ই তাওয়াককুল করতে পারে, তাহলে মানুষেরাও পাখিদের মত স্বাধীন ও সুখী হতে পারে। সুখী হবার মূল মন্ত্র এটাই, সম্পদ নয়।

পৃথিবীতে মানুষে মানুষে যত বৈষম্য, সব সম্পদের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তাই, আল্লাহ তায়ালা সম্পদ দিয়ে মানুষকে বিচার করেন না। বরং অন্যান্য প্রাণীদের মত মানুষের সৎকাজের ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষকে মূল্যায়ন করেন। ইসলামেও মানুষকে মূল্যায়ন করার মানদণ্ড সম্পদ নয়, বরং সৎকাজ।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান মানুষেরা বা নবী রাসূলদের অধিকাংশ-ই ছিলেন গরিব। ইসলাম গ্রহণ করার পর আবু বকর (রা), উমর (রা), উসমান (রা) ও খাদিজা (রা) সহ অসংখ্য সাহাবী ধনী থেকে গরিব হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সম্মান বেড়ে গিয়েছিল, এবং তাঁরা সবাই জিরো থেকে হিরো হয়ে গিয়েছিলেন। সম্মান বেড়েছে তাঁদের সৎকাজের ভিত্তিতে, সম্পদের ভিত্তিতে নয়।

ইসলামে সম্পদ ও মর্যাদা দুটি বিষয় অনেকটা পরস্পর বিরোধী। কিন্তু বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে, সম্মান মানে সম্পদ, আর সম্মান মানে সম্পদ।

কোর’আনে সম্পদের ভালোবাসাকে খুবই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। ইসলামে সম্পদের প্রতি ভালোবাসাকে শিরক বলা হয়। কারণ, সম্পদ পৃথিবীতে একটি কৃত্রিম মায়াজাল সৃষ্টি করে, এটি মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে, এবং মানুষকে কুফরির দিকে নিয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

“তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উদাহরণ একপশলা বৃষ্টির মত। (বৃষ্টির কারণে) সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে। কিন্তু এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছু নয়”। [সূরা ৫৭/হাদীদ – ২০]

অন্য আয়াতে বলেন –

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ

জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি অকল্যাণের সম্মুখীনকারী। বস্তুত: আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার। [সূরা ৮/আনফাল – ২৮]

এ ধরণের অনেকগুলো আয়াতে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর ধন-সম্পদকে একটি অস্থায়ী ও ক্ষতিকর মানদণ্ড হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইসলামের প্রকৃত, উন্নত ও একমাত্র মানদণ্ড হলো মানুষের সৎকাজ। আর, সৎকাজের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের মাঝে কোনো বৈষম্য নেই। কোর’আনের যেসব আয়াতে, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, নারী ও পুরুষের মাঝে যে বৈষম্য আছে, তা আসলে বস্তুবাদী, অস্থায়ী ও ক্ষতিকর সম্পদের মানদণ্ডে মানুষকে মূল্যায়ন করার ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

সম্পদের ভিত্তিতে মানুষকে মূল্যায়ন করলে, কেবল নারী ও পুরুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। পৃথিবীতে এমন দুইজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাদের সকল সম্পত্তি সমানে সমান। আপনি যে বাড়ীর মালিক, পৃথিবীর আর কেউই সেই বাড়ির মালিক নয়। সুতরাং, সম্পদের মানদণ্ডে কারো মর্যাদা নির্ণয় করাটা একটি কৃত্রিম পদ্ধতি।

কোর’আনে মানুষের মর্যাদা নির্ণয়ের মানদণ্ড হিসাবে সম্পদকে যেহেতু গণ্য করা হয় না, তাই সম্পদ কম বা বেশির কারণে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো বৈষম্য তৈরি হয় না। কিন্তু, বস্তুবাদীদের কাছে সম্পদ-ই হলো মানুষকে মূল্যায়ন করার একমাত্র মানদণ্ড। এ কারণে, বস্তুবাদীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসে বলেন, ইসলাম নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।

কেবল ধর্ম বিদ্বেষীরা নয়, যারাই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইসলামকে দেখে, তারাই বলেন – “ইসলাম নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে”।

 

২য় পর্ব

মানুষের মধ্যে দুটি অংশ। নারী ও পুরুষ। নারীদের প্রধান কাজ হলো মানুষ তৈরি করা। আর পুরুষদের প্রধান কাজ হলো প্রাণী, উদ্ভিদ ও বস্তু তৈরি করা। নারীরা মানুষ তৈরি করার সময় পুরুষদের সাহায্য প্রয়োজন হয়, আবার পুরুষেরা বস্তু তৈরি করার সময় নারীদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। কিন্তু নারী ও পুরুষ প্রত্যেকের প্রধান দায়িত্ব আলাদা আলাদা।

অর্থাৎ, নারীরা উন্নত চেতনাসম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করবে, আর পুরুষেরা নিম্ন চেতনাসম্পূর্ণ বস্তু তৈরি করবে। এটাই প্রাকৃতিক সিস্টেম।

কিন্তু, বস্তুবাদ প্রাকৃতিক এই সিস্টেমকে উল্টোভাবে দেখে। যারা উন্নত চেতনাসম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করে তাঁদেরকে দেখে নিম্নভাবে। আর যারা নিম্ন চেতনাসম্পূর্ণ বস্তু তৈরি করে, তাদেরকে দেখে উচ্চ মর্যাদার চোখে। কারণ, বস্তুবাদ সবকিছুকে তার মত বস্তুতে বা নিম্ন চেতনায় নিয়ে আসতে চায়। সহজ কথায়, বস্তুবাদ চায় বস্তুর আধিক্য, তাই নারীকে মানুষ তৈরির কারখানা থেকে বস্তু তৈরির কারখানায় নিয়ে আসতে চায়।

কেউ বলতে পারেন, নারীরা উচ্চ চেতনাসম্পূর্ন মানুষ তৈরি করে বলে নারীরাই সেরা। আবার, কেউ বলতে পারেন, পুরুষেরা আধুনিক যন্ত্র বা নিম্ন চেতনার বস্তু নির্মাণ করেন বলে পুরুষেরাই সেরা। কিন্তু ইসলাম এভাবে কাউকে সেরা বা কাউকে অধম হিসাবে মূল্যায়ন করে না।

ইসলাম মানুষকে মূল্যায়ন করে তাঁর সৎকাজের ভিত্তিতে। ফলে, ইসলামে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো বৈষম্য নেই।

যেমন আল্লাহ তায়ালা বলছেন –


وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًۭا

“পুরুষ হোক বা নারী হোক, যেই সৎ কাজ করবে, সেই বিশ্বাসী। এবং তাঁরা সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাঁদের প্রতি বিন্দু পরিমাণ জুলুম বা বৈষম্য করা হবে না”। [সূরা ৪/নিসা – ১২৪]

এই আয়াতে স্পষ্ট যে, আখিরাতে মানুষকে তার সৎ কাজের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। এবং সেখানে নারী বা পুরুষের মাঝে বিন্দু পরিমাণ কোনো বৈষম্য করা হবে না।

অনেকে হয়তো বলবেন, এই আয়াতে কেবল আখিরাতের কথা বলা হয়েছে, দুনিয়ার কথা বলা হয়নি। সুতরাং, দুনিয়াতে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য রয়েছে।

তাহলে অন্য একটি আয়াত দেখুন। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

وَٱلْمُؤْمِنُونَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍۢ ۚ يَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ ٱللَّهُ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌۭ

“বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, তাঁরা একে অপরের বন্ধু বা সহযোগী। তাঁরা সৎ কাজের আদেশ দেয়, এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে। সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। যারা এমন করে, তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়”। [সূরা ৯/তাওবা – ৭১]

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসী নারী ও পুরুষকে পরস্পরের বন্ধু বা সহযোগী বলেই আয়াতটি শেষ করেননি, তিনি দেখিয়েছেন, ইসলামের সকল কাজে নারী ও পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার রয়েছে।

অর্থাৎ, এই আয়াত অনুযায়ী,

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা যদি পুরুষদের জন্যে ফরজ হয়, তাহলে নারীদের জন্যেও তা ফরজ। কেউ যদি মনে করে, সৎ কাজের আদেশ দেয়ার জন্যে পুরুষদেরকে রাজনীতি করা উচিত, তাহলে নারীদেরও রাজনীতি করা উচিত। সমান তালে।

পুরুষেরা যেমন মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করবে, নারীরাও তদ্রূপ মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করবে। পুরুষেরা যেমন যাকাত দেয়ার জন্যে সম্পদ অর্জন করতে পারবে, ঠিক তেমনি নারীরাও সম্পদ অর্জন করতে পারবে।

ইসলামের মৌলিক কোনো কাজেই নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য নেই। একজন মুসলিম পুরুষের যতগুলো দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে, একজন মুসলিম নারীরও ঠিক ততগুলো দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে।

৩য় পর্ব

ইসলামে নারী ও পুরুষের সমান অবস্থান নিয়ে লেখার পর এক ভাইয়া কমেন্ট করেছেন–

“আপনার এ পোস্টে বুঝলাম যে, ইসলাম সম্পদ দিয়ে মানুষের বিচার করে না। তার তাক্বওয়া, দ্বীনদারই দিয়ে বিচার করে। কিন্তু, এটা বুঝা যাইতেসে না যে, কেন ইসলাম বোনদের আট আনা, আর ভাইদের ষোল আনা দিল?”

–এ প্রশ্নটি করার মাধ্যমে ঐ ভাইয়াকে ধর্ম বিদ্বেষী একটি ভাইভা বোর্ডে আটকে দেয়া হল।


কিন্তু, ইসলাম কি সত্যিই বোনদের আট আনা, আর ভাইদের ষোল আনা প্রদান করে?

আসলে, যারা কোর’আন পড়ে না, তারাই ইসলামের ব্যাপারে এসব মিথ্যা অভিযোগ করে। তারা অন্ধ ও মূর্খ, তাই তারা দিনকে রাত বলে। তাদের নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু, আমরা যারা মুসলিম, আমাদের উচিত কোর’আনটা ভালোভাবে পড়া।

আমাদের মুসলিমদের কোর’আনের জ্ঞান না থাকার কারণেই ধর্ম-বিদ্বেষীরা আমাদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে।

যাই হোক, সরাসরি কোর’আনে চলে যাই। ভাই-বোনকে সম্পত্তি বণ্টনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ فَإِن كَانُوٓا۟ أَكْثَرَ مِن ذَ‌الِكَ فَهُمْ شُرَكَآءُ فِى ٱلثُّلُثِ

“কোনো ব্যক্তি মারা যাবার পর যদি তার পিতা-পুত্র অথবা স্ত্রী না থাকে, কিন্তু একজন ভাই বা একজন বোন থাকে, তাহলে প্রত্যেকে এক ষষ্ঠাংশ সম্পত্তি পাবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক ভাই-বোন থাকে, তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পাবে”। [সূরা ৪/নিসা – ১২]

কোর’আনের এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ভাই ও বোনের সমান অধিকার ও সমান সম্পত্তি। অর্থাৎ, কোনো মানুষ মারা গেলে তার পিতা-পুত্র বা স্ত্রী না থাকলে, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তার ভাই যা পাবে, তার বোনও তা পাবে। ভাই অথবা বোন যদি একজন হয়, তাহলে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ পাবে। আর, ভাই অথবা বোন যদি একাধিক হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির ঋণ শোধ করার পর বাকি সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ সমানভাবে ভাই ও বোনের মাঝে বণ্টন করা হবে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বলি।

ধরুন, জোবায়ের আল মাহমুদ আজ মারা গেল। কিন্তু সে যেহেতু বিয়ে করে নাই, তাই তার বউ-পোলাপান নাই। ধরুন, জোবায়েরের বাবাও নাই। জোবায়েরের আছে একমাত্র ভাই ওমায়ের।

মারা যারার সময় জোবায়েরের পকেটে ছিল ৬ টাকা। সুতরাং, এই ৬ টাকা থেকে জোবায়েররের একমাত্র ভাই ওমায়ের পাবে ১ টাকা।

ধরুন, জোবায়েরের কোনো ভাই নেই। আছে একমাত্র বোন মিতু। তাহলে, জোবায়েরের রেখে যাওয়া ৬ টাকা থেকে মিতু পাবে ১ টাকা। অর্থাৎ, ভাই হোক অথবা বোন হোক, উভয়ে জোবায়েরের সমান সম্পত্তি পাবে।

ধরুন, জোবায়েরের একজন ভাইও আছে, আবার একজন বোনও আছে। তাহলে জোবায়েরের রেখে যাওয়া ৬ টাকার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২ টাকা দুই ভাইবোন উভয়ের মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে। তখন ওমায়ের পাবে ১ টাকা, এবং মিতুও পাবে ১ টাকা। উভয়ে সমান সমান টাকা পাবে। এখানে ওমায়ের ছেলে হবার কারণে বেশি সম্পদ পাবে না, আবার মিতু মেয়ে হবার কারণে কম সম্পদ পাবে না।

শুধু ভাইবোন না, কোর’আনের অনেক স্থানেই নারী ও পুরুষকে সমান সম্পত্তি দেয়া হয়েছে।

যেমন ধরুন, জোবায়ের যদি বিয়েসাদি করে মারা যায়, তাহলে জোবায়েরের দাদা একজন পুরুষ হয়েও যা পাবে, জোবায়েরের দাদি একজন নারী হয়েও তা পাবে। এখানেও, নারী ও পুরুষ সমান সম্পত্তি পাবে।

সুতরাং, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তারা আসলে অজ্ঞ ও মূর্খ। কোর’আন না জানার কারণেই তারা এসব কথা বলেন। কিন্তু আমাদের মুসলিমদেরকে ভালোভাবে কোর’আন জানতে হবে।

৪র্থ পর্ব

কোর’আনের যে আয়াতগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াত তার একটি। অনেকে এই আয়াতটি না বুঝেই সমালোচনা বা বিতর্ক শুরু করেন।

আয়াতটির প্রথম বাক্য হলো –

ٱلرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ

বাংলায় এ বাক্যের অনুবাদ করা হয় – “পুরুষেরা নারীদের কর্তা”।

অনেকে এই সূত্র দিয়ে বেশ কিছু অনুসিদ্ধান্ত তৈরি করে নেয়। যেমন, ভাই বোনের কর্তা, ছেলে মায়ের কর্তা, বাবা মেয়ের কর্তা, ছেলে শিশু মেয়ে শিশুর কর্তা, তরুণ তরুণীর কর্তা, চাকর চাকরানীর কর্তা, বিশ্বাসী পুরুষ বিশ্বাসী নারীর কর্তা, শিক্ষক শিক্ষিকার কর্তা, পুরুষ শ্রমিক নারী শ্রমিকের কর্তা, গায়ক গায়িকার কর্তা। অর্থাৎ, সব পুরুষ সব সময় সব নারীর কর্তা।

আসলে, বাংলা ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে, কোর’আনের এই বাক্যটির সঠিক অর্থ আমরা অনেকেই বুঝি না।

আয়াতে ব্যবহৃত ‘রিজাল’ [رجال] শব্দটি দ্বারা আরবি ভাষায় সব ধরণের পুরুষকে বুঝানো হয় না। আবার, ‘নিসা’ [نساء] শব্দটি দ্বারাও সব ধরণের নারীকে বুঝানো হয় না।

যেমন, আরবিতে,

ছোট ছেলেকে বলা হয় – طفل , غلام , ولد
ছোট মেয়েকে বলা হয় – طفلة , جارية , بنت
তরুণ ছেলেকে বলা হয় –فتى , مراحق , صبي , يافع , شاب
তরুণী মেয়েকে বলা হয় –فتاة , مراحقة , صبية , يافعة , شابة
বৃদ্ধ পুরুষকে বলা হয় –شيخ
বৃদ্ধা নারীকে বলা হয় – شيخة

আরবি ভাষায় সব ধরণের পুরুষকে বুঝানো জন্যে ব্যবহার করা হয় ‘যাকার’ [الزكر] শব্দটি, এবং সব ধরণের নারীকে বুঝানোর জন্যে ব্যবহার করা হয় ‘উনসা’ [الأنثى] শব্দটি।

আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম একটি আত্মা সৃষ্টি করেছেন। সেই আত্মাটি পুরুষও নয়, নারীও নয়। এরপর এই আত্মাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। একটি অংশ পুরুষ [الزكر], অন্য অংশটি নারী [الأنثى]। [সূত্র - ৪:১; ৩: ১৯৫; ৪৯: ১৩; ৭৫: ৩৯; ৯২:৩]।

কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একটি অংশ পুরুষ, এবং একটি অংশটি নারী রয়েছে। [সূত্র - ৬: ১৪৩, ১৪৪]

পৃথিবীতে নারী অংশের সাথে পুরুষ অংশের মর্যাদাগত কোনো বৈষম্য নেই। তাই দেখুন, আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে পুরুষের জন্যে ‘যাকার’ [الزكر] এবং নারীর জন্যে ‘উনসা’ [الأنثى] শব্দটি ব্যবহার করেননি। অর্থাৎ, ‘সব ধরণের পুরুষ সব সময় সব ধরণের নারীর উপর কর্তা’ – এ কথা আল্লাহ তায়ালা বলেননি। তিনি পুরুষদের একটি নির্দিষ্ট অংশ এবং নারীদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে বুঝিয়েছেন। সুতরাং, “পুরুষেরা নারীদের কর্তা”, এটা একটা অপূর্ণাঙ্গ অনুবাদ।

কোর’আনে ‘রজুল’ [رجل] শব্দটি যখন এককভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন পুরুষ ও নারী উভয়কে বুঝানো হয়। [সূত্র ২৪: ৩৭, ৭: ৪৬]। কিন্তু, ‘রজুল’ শব্দটির সাথে যখন ‘নিসা’ [نساء] শব্দটি থাকে তখন ‘রজুল’ দ্বারা বিবাহিত বা বিবাহ যোগ্য পুরুষদের বোঝানো হয়, এবং ‘নিসা’ দ্বারা বিবাহিত বা বিবাহ যোগ্য নারীদেরকে বোঝানো হয়।

অর্থাৎ, সূরা নিসার এ আয়াতে কেবল বিবাহ দ্বারা সম্পর্কিত নারী ও পুরুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই এই আয়াতের সূত্র ধরে, ভাই বোনের কর্তা, ছেলে মায়ের কর্তা, শিক্ষক শিক্ষিকার কর্তা, এভাবে এটাকে সর্ব সাধারণ সূত্র করে ফেলা যায় না।

তারপর, আসুন দেখি, বিবাহিত পুরুষ কি ‘সবসময়’ বিবাহিত নারীর কর্তা হতে পারে?

উত্তর – না।

যখন কোনো স্ত্রী প্রকাশ্যে পর পুরুষের সাথে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তখনি কেবল স্বামী কর্তার ভূমিকা পালন করতে পারবে। কিন্তু, স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো স্বামীকে তার স্ত্রীর উপর কর্তাগিরি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদের উপর অধিকার গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে হালাল নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা নিয়ে নেয়ার জন্যে তাদেরকে আটক করে রেখ না। যদি তারা স্পষ্ট ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা তাদেরকে যদি অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। [সূরা ৪/নিসা – ১৯]

এ আয়াতে একেবারে স্পষ্ট যে, স্বাভাবিক অবস্থায় নারীদের উপর জোর করে কর্তাগিরি করা যাবে না। স্ত্রী যদি প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখনি কেবল পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তা হতে পারবে। ৩৪ নং আয়াতেও তাই বলা হয়েছে।

আসলে যারা সূরা নিসার ১ ও ১৯ নং আয়াত ভালোভাবে না পড়ে সোজা ৩৪ নং আয়াতে দৌড়ে চলে যায়, তারাই কোর’আনকে ভুল বুঝে, বিতর্ক করে এবং কর্তাগিরি করতে থাকে।

এ ছাড়া, রাসূল (স) বলেছেন -

لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئًا غَيْرَ ذَلِكَ، إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ

"নারীদের উপর তোমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তবে, তারা যদি প্রকাশ্যে অশ্লীল কোনো কাজে জড়িত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা।"

তিনি আরোও বলেন -

إِنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقًّا وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقًّا

"নারীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও নারীদের অধিকার রয়েছে।"

[সুনানে তিরমিজি, পুরুষের উপর নারীর অধিকার অধ্যায়, খণ্ড - ৩, পৃষ্ঠা - ৪৫৯]

৫ম পর্ব

এখন সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের দ্বিতীয় বাক্যটি বোঝার চেষ্টা করব।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ

“আল্লাহ তায়ালা একের উপর অন্যের মর্যাদা দান করেছেন”।

অনেকে এ বাক্যটি পড়ে মনে করেন, আল্লাহ তায়ালা কেবল পুরুষকে নারীর উপর মর্যাদা দিয়েছেন, কিন্তু নারীকে পুরুষের উপর মর্যাদা দেননি।

কেউ যদি উপরের ব্যাখ্যাটিকে এভাবে গ্রহণ করে, তাহলে কোর’আনের অনেকগুলো আয়াত ও রাসূল (স)-এর অনেকগুলো হাদিসের সাথে বৈপরীত্য তৈরি হবে।

যেমন, সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “নারীরা তোমাদের পোশাক, এবং তোমরা নারীদের পোশাক”। এখানে একবার বলা হচ্ছে নারীরা পুরুষদের পোশাক, আবার বলা হচ্ছে পুরুষরা নারীদের পোশাক। অর্থাৎ, একবার পুরুষেরা পোশাকের মত নারীর উপরে যাবে, আবার নারীরা পোশাকের মত পুরুষের উপরে যাবে।

এরপর, সূরা তাওবার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, বিশ্বাসী নারী ও পুরুষ একে অপরের বন্ধু বা সহযোগী। অর্থাৎ, কিছু কাজে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দক্ষ, তাই সেসব ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করবে। আবার, কিছু কাজে পুরুষেরা বেশি দক্ষ, তাই সেসব ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা গ্রহণ করবে। বিশ্বকে সাজাতে নারী ও পুরুষ উভয়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং উভয়ে পরস্পরের সহযোগী।

তারপর, সূরা আলে ইমরান ১৯৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, পুরুষ ও নারী একে অপরের অংশ। আল্লাহ তায়ালা প্রথমে একটি আত্মা সৃষ্টি করেন। এরপর এটাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। একটি অংশ ধনাত্মক, এবং অন্য একটি অংশ ঋণাত্মক। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি ব্যতীত পৃথিবীর একটি পরমাণুও গঠিত হয় না। সুতরাং, ধনাত্মক আয়ন সে তার নিজের অবস্থানে সেরা, আবার ঋণাত্মক আয়ন সেও তার নিজের অবস্থানে সেরা। এখানে নারী ও পুরুষ উভয়ে উভয়ের অংশ।

এবার হাদিসে আসুন।

কেউ যদি বলে, “আল্লাহ তায়ালা কেবল পুরুষকে নারীর উপর মর্যাদা দিয়েছেন, কিন্তু নারীকে পুরুষের উপর মর্যাদা দেননি”, তাহলে রাসূল (স)-এর অনেকগুলো হাদিসের সাথেও বৈপরীত্য তৈরি হবে।

যেমন,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : "جاء رجلٌ إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي؟، قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أبوك) متفق عليه .

“আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (স)-এর কাছে এসে বললেন, হে রাসূলুল্লাহ! আমার সাহচর্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কোন মানুষের? রাসূল (স) বললেন – তোমার মা। সাহাবি বললেন – এরপর কে? রাসূল (স) বললেন – তোমার মা। সাহাবি বললেন – এরপর কে? রাসূল (স) বললেন – তোমার মা। সাহাবি বললেন – এরপর কে? রাসূল (স) বললেন – তোমার বাবা।” [বুখারি ও মুসলিম]

এখানে রাসূল (স) নারীকে পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি সম্মান দিয়েছেন। তাই, কেউ যদি মনে করে, পুরুষেরা নারীদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাহলে উপরোক্ত আয়াতগুলো ও হাদিসের সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়।

সুতরাং, “আল্লাহ একের উপর অন্যের মর্যাদা দিয়েছেন” – এর মানে হলো, আল্লাহ তায়ালা কখনো কখনো পুরুষকে নারীর উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আবার কখনো কখনো নারীকে পুরুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন।

কেবল নারী ও পুরুষ একের উপর আল্লাহ তায়ালা অন্যকে মর্যাদা দিয়েছেন, বিষয়টি এমন না। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিভিন্নভাবে মর্যাদা প্রদান করেন। কিন্তু মানুষ হিসাবে পৃথিবীর সব মানুষ সমান। আল্লাহ তায়ালা বলেন –

انظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا

“লক্ষ্য কর, আমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে মর্যাদা দান করেছি। কিন্তু, পরকালেই রয়েছে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা।” [ সূরা ১৭/ বনী ইসরাঈল – ২১]

এই আয়াতের আলোকে পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা দেখি, কখনো একজন ডাক্তারের উপর একজন ইঞ্জিনিয়ারের বেশি মর্যাদা থাকে, আবার, কখনো একজন ইঞ্জিনিয়ারের উপর একজন ডাক্তারের মর্যাদা বেশি মর্যাদা থাকে। কিন্তু মানুষ হিসাবে একজন ইঞ্জিনিয়ার ও একজন ডাক্তার যেমন সমান গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একজন নারী ও পুরুষও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

আচ্ছা,

তর্কের বা আলোচনার সুবিধার্থে ধরে নিলাম, “পুরুষ নারীর চেয়ে বেশি মর্যাদাবান”। কিন্তু মর্যাদার কারণে কি পুরুষ শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়? অথবা, মর্যাদার কারণে কি নারী ও পুরুষের মাঝে পার্থক্য ও বৈষম্য তৈরি করা যায়?

এ বিষয়ে কোর’আনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে বলছেন, রাসূলদের মধ্যে তিনি একজনকে আরেক জনের উপর মর্যাদা দান করেছেন। যেমন তিনি ঈসা (আ)-কে সম্মানিত করেছেন।

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ

“এই রসূলগণ, তাদের একের উপর অন্যকে মর্যাদা দান করেছি। তাঁদের কেউ কেউ আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। আবার, কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আমি মরিয়মের পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছি এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা তাঁকে শক্তিশালী করেছি। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করছেন, স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম পরস্পর লড়াই করত না। কিন্তু তাঁরা মতভেদ করলো, এবং তাদের কেউ কেউ বিশ্বাসী হল, আর কেউ কেউ অবিশ্বাসী হল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা কেউ যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।” [সূরা ২/বাকারা – ২৫৩]

এ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা রাসূলদের মাঝে একের উপর অন্যকে মর্যাদা দিয়েছে। এবং ঈসা (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত করেছেন। কিন্তু, এখন আমরা কি বলতে পারি যে, ঈসা (আ) সকল রাসূলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাসূল ছিলেন?

উত্তর – না।

কারণ, আল্লাহ তায়ালা একেক রাসূলকে একেকভাবে মর্যাদা দান করেছেন। কিছু মর্যাদা ইব্রাহীম (আ)-কে দান করেছেন, কিন্তু ঈসা ও মূসা (আ)-কে দান করেননি। কিছু মর্যাদা মূসা (আ)-কে দান করেছেন, কিন্তু ঈসা ও ইব্রাহীম (আ)-কে দান করেননি। আবার কিছু মর্যাদা কেবল ঈসা (আ)-কে দান করেছেন, যা অন্য রাসূলদেরকে দান করেননি।

তাই,

অন্য একটি আয়াতে, মর্যাদা ভিত্তিতে কোনো নবী ও রাসূলের মাঝে পার্থক্য করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন।

قُولُوٓا۟ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ إِلَىٰٓ إِبْرَ‌ٰهِۦمَ وَإِسْمَـٰعِيلَ وَإِسْحَـٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَآ أُوتِىَ ٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍۢ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ

“তোমরা বল, আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যা ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ও তার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে দেয়া হয়েছে, আমরা সব কিতাবের উপর ঈমান এনেছি। আমরা নবীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। এবং আমরা সবাই মুসলিম।” [সূরা ২/বাকারা – ১৩৬]

আয়াত দুটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রথমে আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ)-কে অন্য রাসূলদের তুলনায় মর্যাদা দিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতে এসে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, তোমরা ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা ও ঈসা কারো মাঝে কোনো পার্থক্য করো না। তাহলে এই আয়াত দুটি কি পরস্পর বিরোধী?

উত্তর – না।

আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাঁকে মর্যাদা দান করেন। কখনো ঈসা (আ)-কে, কখনো মুহাম্মদ (স)-কে। কখনো একজন ডাক্তারকে, কখনো একজন ইঞ্জিনিয়ারকে। কখনো নারীকে, কখনো পুরুষকে। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর দেয়া মর্যাদার ভিত্তিতে আমাদের মাঝে কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য করা উচিত না।

৬ষ্ঠ পর্ব

পুরুষতন্ত্র বা নারীবাদ উভয়ের কাউকে সমর্থন করে না ইসলাম।


পুরুষতন্ত্রের মাধ্যমে পুরুষেরা নারীদেরকে দাসীতে পরিণত করে, আর নারীবাদের মাধ্যমে নারীরা পুরুষদেরকে দাসে পরিণত করে। কিন্তু ইসলামে নারী বা পুরুষ কেউ কারো দাস নয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে নারী ও পুরুষ সবাই সমান।

পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোর'আনে বলা হয়েছে -

أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخَالِقِينَ

“তোমরা কি স্বামীদেরকে আরাধনা কর? অথচ তোমরা সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে পরিত্যাগ কর।” [সূরা ৩৭/সাফফাত – ১২৫]

অন্যদিকে, নারীবাদীদের বিরুদ্ধে কোর'আনে বলা হয়েছে -

إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيدًا

“তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং অবাধ্য শয়তানের পূজা করে”। [সূরা ৪/নিসা – ১১৭]

আমাদের দেশের পরিবারগুলোতে তাকালে দেখবেন, কেউ কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে এমন কঠোর ব্যবহার করেন, মনে হয়, নারী হলো তার সেবাদাসী। সারাদিন স্বামীর খেদমত করাই যেন নারীর একমাত্র কাজ।

আবার, কেউ কেউ স্বামীর সাথে এমন ব্যবহার করেন, মনে হয়, পুরুষটি হলো নারীর সেবাদাস। পুরুষটি কি খাবে, কি পরবে, মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলবে, প্রতিবেশীর সাথে কিভাবে চলবে, সব ঐ নারীটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

পুরুষতন্ত্র ও নারীবাদ দুটি পরস্পর বিরোধী উগ্র প্রান্তের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করে ইসলাম। ইসলাম বলে, নারী ও পুরুষ কেউ কারো দাস নয়, কেউ কারো বিরোধীও নয়।

কোর'আন বলে – “নারী ও পুরুষ একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী”

৭ম পর্ব

সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালি নারীদেরকে প্রায়ই দেখি, তারা ‘নারী অধিকার’ নিয়ে খুবই সোচ্চার। কিন্তু, আজ পর্যন্ত একজন নারীকেও আমার চোখে পড়েনি, যারা পুরুষদের অধিকার নিয়ে লিখেন।

দেখুন, কোর’আনে নারী পুরুষ উভয়কে উভয়ের অংশ, বন্ধু ও সহযোগী বলা হয়েছে। সে কারণে, পুরুষদের অনেকেই ‘নারী অধিকার’ নিয়ে লিখে থাকেন। কিন্তু, নারীরা পুরুষদের অধিকার নিয়ে লিখেন না কেন?

কারণ, আসলে যারাই ‘নারী অধিকার’ নিয়ে কথা বলেন, তারাই পশ্চিমাদের অনুকরণ করে এবং ইসলামের বাইরে গিয়ে পুরুষদেরকে শত্রু মনে করেন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় দেখি, একপক্ষ চোখ বন্ধ করে বলতে থাকেন – “দেখছেন আপা? পুরুষেরা কত খারাপ!!!” আরেক পক্ষ বলতে থাকেন – “দেখছেন ভাই? নারীরা কত খারাপ!!!”

নারীরা বলেন, “পুরুষেরা পাষাণ”, আবার পুরুষেরা বলেন, “নারীরা ছলনাময়ী”। কিন্তু এভাবে কোনো একটি পক্ষকে খারাপ বলাটা খুবই অন্যায়। কেননা, এতে আল্লাহ তায়ালার উপর-ই একটি অন্যায় অভিযোগ আরোপ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা কি পুরুষদেরকে পাষাণ করে তৈরি করেছেন? আর, নারীদেরকে ছলনাময়ী করে তৈরি করেছেন?

অবশ্যই না।

নারী ও পুরুষ উভয় উভকে শত্রু আকারে গণ্য করার রীতি মুসলিম বিশ্বে কখনোই ছিল না। এটি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমাদের মুসলিম বিশ্বে আমদানি করা হয়। ফলে, এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি, অনেক ধার্মিক নারীও গণহারে পুরুষদের বিরোধিতা করছেন।

দেখুন, আমরা পরস্পরের অংশ, বন্ধু ও সহযোগী। আমরা কেউ কারো শত্রু নই।

আমরা পুরুষেরা যেমন নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলি, আপনারা নারীরাও পুরুষদের অধিকার নিয়ে কথা বলুন। তাহলেই কেবল আমরা পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী হতে পারব, ইনশাল্লাহ।

৮ম পর্ব

কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই ধার্মিক পুরুষদেরকে দেখি নারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতে দিতে অস্থির হয়ে পড়েন।

কিন্তু কোর’আনে বলা হয়েছে, নারীদের বিষয়ে ফতোয়া দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন –


وَيَسْتَفْتُونَكَ فِى ٱلنِّسَآءِ ۖ قُلِ ٱللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ

“তারা তোমাকে নারীদের বিষয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করে। তুমি বল, আল্লাহ-ই নারীদের বিষয়ে তোমাদেরকে ফতোয়া দিতে পারেন”। [সূরা ৪/নিসা – ১২৭]

নারীদের বিষয়ে ফতোয়া দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি নারীদের বিষয়ে যা বলেছেন তা থেকে একটুও বেশি বাড়িয়ে বলা আমাদের উচিত নয়।

৯ম পর্ব

ধরুন, এক মাস ধরে আপনার আশেপাশের মানুষেরা বলাবলি করছে যে, “আপনার স্ত্রী কারো সাথে যেনা করেছে”।

একজন ধার্মিক মুসলিম হিসাবে আপনি তখন কি করবেন?

আপনি যদি আরবের জাহেলদের মত কোর’আন ও ইসলাম না বুঝে থাকেন, তাহলে ঘরে গিয়েই স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করবেন। তাই না?


কিন্তু, আপনি যদি সত্যিকার অর্থে মুহাম্মদ (স)-এর একজন অনুসারী বা মুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কখনোই স্ত্রীকে প্রহার করার ফতোয়া দিতে পারেন না।

কারণ,

স্বয়ং রাসূল (স)-এর স্ত্রী আয়েশার ব্যাপারে যখন যিনার অভিযোগ আসলো, তখন কি তিনি আয়েশা (রা)-কে প্রহার করেছিলেন?

ঐ সময়ে রাসূল (স) আয়েশা (রা)-কে বিন্দু পরিমাণ শারীরিক আঘাত করেছেন বলে কোনো ভুয়া হাদিসও খুঁজে পাবেন না।

এখন প্রশ্ন হলো,

কোর’আনে যদি স্ত্রীকে প্রহার করার কথা বলেই থাকে, তাহলে রাসূল (স) সারা জীবনে তাঁর কোনো স্ত্রীকে একবারের জন্যেও কেন প্রহার করলেন না?

রাসূল (স) তাঁর স্ত্রীদের অন্যায়ের কারণে সবাইকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছেন, কিন্তু কেন কাউকে কোনো প্রহার-ই করলেন না?

রাসূল (স) কি সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতটি জানতেন না?






এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”