সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গড হেলমেট দিয়ে কি নাস্তিক কে আস্তিক বানানো যায়?

একবার, বিশ্বকুখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স-কে বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের তার অফিসে ডেকে আনলেন। তাকে বললেন, আপনি তো বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন; তাই না?


ডকিন্স : হুম।

পের্সিঙের : তাহলে আমরা দেখব, বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে আপনাকে নাস্তিক থেকে আস্তিক বানাতে পারি কিনা?

ডকিন্স : ওকে।

উল্লেখ্য, মাইকেল পের্সিঙের একজন নিউরো বিজ্ঞানী। তিনি এবং বিজ্ঞানী স্ট্যানলি করেন, উভয়ে একটি হেলমেট আবিষ্কার করেন। যার নাম – ‘গড হেলমেট’। এই ‘হেলমেট’টি দিয়ে তারা পরীক্ষা করেন যে - মানুষের মস্তিষ্কের কোন জায়গায় তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তারা মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরির চেষ্টা করেন।

তো, তারা ডকিন্স-কে একটি বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার মাথায় ‘গড হেলমেট’টি লাগিয়ে দিলেন। ডকিন্সের চোখ বন্ধ করে দিলেন। এবং ডকিন্সের রুম থেকে সবাই বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

বিজ্ঞানী পের্সিঙের পাশের রুম থেকে উন্নত মানের যন্ত্রের সাহায্যে ডকিন্সের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠাতে শুরু করলেন। এর ফলে, বৈজ্ঞানিক থিউরি অনুযায়ী, নাস্তিক ডকিন্সের মাথায় একটি ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি তৈরি হবে।

যদি ডকিন্স-এর মাথায় ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত হয়, এবং সে ধর্মীয় অনুভূতিগুলোকে বিশ্বাস করে, তাহলে বুঝতে হবে, বিজ্ঞান সঠিক। আর যদি ডকিন্স-এর মাথায় কোনো ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত না হয়, এবং সে যদি নাস্তিক-ই থেকে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বিজ্ঞান ভুল, ডকিন্স সঠিক।

এরপর, ৪০ মিনিট পর্যন্ত ডকিন্সকে একটি বদ্ধ ঘরে রেখে তার মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠানো হলো। কিন্তু অবশেষে ডকিন্স বললেন যে, ‘আমার ব্রেইনে কোনো অনুভূতি-ই সৃষ্টি হয়নি, আমি নাস্তিক নাস্তিক-ই থাকব। সুতরাং, এ বিজ্ঞান ভুয়া।

এদিকে, বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের এত সহজে নাস্তিক ডকিন্সের কথা মেনে নেয়ার লোক নন। তিনি বললেন, আমার গবেষণায় কোনো সমস্যা নেই, ডকিন্স-এর মাথায় সমস্যা আছে। কারণ, ডকিন্সের মস্তিষ্কে সংবেদনশীলতার পরিমাণ এতটাই কম যে কোনো সিগন্যাল-ই কাজ করছে না। সুতরাং, সমস্যা ডকিন্সের মাথায়।

ঘটনাটি এখানেই শেষ। এবার আপনাদের জন্যে কুইজ।

বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের এবং নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স, এ দু’জনের মধ্যে কে সঠিক ছিল, এবং কে ভুল ছিল?

জানি, আপনি হয়তো ভাবছেন, মাইকেল পের্সিঙের গবেষণা সঠিক ছিল, কিন্তু রিচার্ড ডকিন্সের মাথায় সমস্যা ছিল।

আসলে তারা দুই জনেই ভুল ছিল। কিভাবে? উত্তর পাবেন আল কোর’আনে।-

إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ

"আমাদের ইলাহ এক। সুতরাং যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের হৃদয় সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।” [সূরা ১৬/নাহল – ২২]

আসলে, ডকিন্স এর সমস্যা তার মাথায় না, বরং তার হৃদয়ে। সে অহংকারী ও সত্যবিমুখ। আর, এ কারণে আল্লাহ তায়ালা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন। যার ফলে সে আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস আনতে পারছে না।

অন্যদিকে, বিজ্ঞানী পের্সিঙের মানুষের হৃদয়ে ধর্মবিশ্বাস খোঁজার চেষ্টা না করে মানুষের মাথায় ধর্মবিশ্বাস খোঁজার বৃথা চেষ্টা করছেন। ফলে দু’জনেই ভুল পথে আছেন।

[অবিশ্বাসীগণ কমেন্টে দেয়া ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন, এবং বিস্তারিত জানার জন্যে বিজ্ঞানী মিচিও কাকুর ‘The Future of the Mind’ বইটি পড়তে পারেন।]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।