সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আনের ভাষা কেন বাংলা নয়?

আপনি আফসোস করেছেন কিনা জানি না, তবে আমি ছোটবেলায় খুব আফসোস করতাম –

“আহ!!! কোর’আন যদি বাংলা ভাষায় নাযিল হত!!! কত ভালো হত!!!”

কিন্তু আল্লাহ বলছেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

“আমি একে আরবি ভাষায় কোর'আন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত – ২]

আগে এ আয়াতটা পড়লে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠত,

আমি বাঙালি, আরবি বুঝি না। কিন্তু আল্লাহ বলছেন, আমি আরবি ভাষায় কোর’আন নাযিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। তার মানে কোর’আন কি কেবল আরব ভাষাভাষী মানুষদের জন্যে নাযিল হয়েছিল?

এ প্রশ্নটার জবাব অনেক পরে পেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে, বাধ্য হয়ে যখন চর্যাপদ পড়তে হয়েছিল।

কোর’আন নাযিলের প্রায় ৪০০ বছর পর চর্যাপদ লেখা হয়েছিলো, প্রাচীন বাংলা ভাষায়। কমেন্টের ঘরে সেই চর্যাপদের একটা ছবি দিয়েছি। দেখুন তো, পড়তে পারেন কিনা?

আচ্ছা, ঠিক আছে। পড়তে না পারলে সমস্যা নেই। আধুনিক বাংলা অক্ষরে চর্যাপদের দুই লাইন এখানে তুলে দিচ্ছি। দেখুন তো, বুঝেন কিনা?

[৩৮তম পদ]
“কাঅ ণাবডহি খান্টি মন কেডুয়াল।Jobayer Al Mahmud - Bangla
সদগুরুবঅণে ধর পতবাল”।

এ লাইন দু’টি আধুনিক বাংলা অক্ষরে লেখা সত্ত্বেও যদি না বুঝে থাকেন, তাতেও সমস্যা নেই। এগুলোর অনুবাদ করেছেন সুকুমার সেন, তার থেকে লাইন দু’টির অনুবাদ তুলে দিচ্ছি।

“কায় [হইল] ছোট নৌকাখানি, মন [হইল] কেরোয়াল। সদ্গুরু-বচনে পতবাল (পাল) ধর।”

এবার নিশ্চয় চর্যাপদে কি বলতে চেয়েছে, তা বুঝেছেন। নাকি?

যাইহোক, একবার ভাবুন তো, যদি এই বাংলা ভাষায় কোর’আন নাযিল হত, কোর’আনের অবস্থাটা কি না হত! আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

এবার মূল কথায় আসি। যখন কোর’আন নাযিল হচ্ছিল, তখন বাংলাভাষা বলে কোনো ভাষা পৃথিবীতে ছিল না। বাংলা ভাষার বাবা বা দাদারও তখন জন্ম হয়নি। কোর’আন নাযিলের প্রায় ৪০০ বছর পর বাংলা ভাষার দাদা-বাবারা জন্ম নিতে শুরু করে।

এখানে কোনো ভাষাকে ঘৃণা করা অথবা কোনো ভাষাকে ভালোবাসার ব্যাপার না। সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি। বলতে চাচ্ছি, বাংলা ভাষাকে আল্লাহ তায়ালা অনেক পরে সৃষ্টি করেন। এবং বাংলা ভাষার বিবর্তন চলছে এখনো, পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠেনি আজও।

কেবল বাংলা ভাষা নয়, পৃথিবীর সব ভাষাই প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে। এ কারণে, কেবল তিন’শ বছর আগের বাংলা ভাষাও সাধারণ শিক্ষিত মানুষেরা এখন বুঝতে পারেন না।

কিন্তু আরবি ভাষার ব্যাপারটা ভিন্ন। রাসূল (স) জন্মের পূর্বেই আরবি ভাষাটা বিবর্তিত হয়ে তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে ফেলেছিল। ফলে ১৪০০ বছরের পুরাতন সেই আরবি ভাষায় এখনো মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্ম করে, পরিবারের সাথে কথা বলে, ফেইসবুক-টুইটারে স্ট্যাটাস লিখে, গান গায়, টেলিভিশনে টকশো-নাটক-সিনেমা হয়। এবং আমরা তা শতভাগ বুঝতে পারি।

আল কোর’আন যদি আরবি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় নাযিল হত, তাহলে কোনোভাবে-ই তা এখন আমরা বুঝতে পারতাম না। যেমন, তাওরাতের প্রাচীন হিব্রু ভাষা সাধারণ শিক্ষিত মানুষও এখন বুঝে না। কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেই আরবি ভাষা শিখে কোর’আন বুঝতে পারি।

এ কারণেই, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

“আমি একে আরবি ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত – ২]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”