সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আনের সংখ্যাতাত্ত্বিক মুজিযা নিজে নিজেই যাচাই করুন!



কোর’আনকে সংখ্যা দিয়ে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনটা কি? –এ প্রশ্ন অনেকেই করেন।

আসলে আমাদের বর্তমান যুগে, চোখের সামনে আমরা যত প্রযুক্তি দেখছি, সব কিছুই সংখ্যার দ্বারা পরিচালিত। সব কিছুর ভাষা-ই সংখ্যা।

কম্পিউটার বা মোবাইলের মত সকল প্রযুক্তি-ই আমাদের বাংলা বা ইংরেজি ভাষাকে চিনে না, সে চিনে কিছু বাইনারি সংখ্যাকে। আমরা যা-ই লেখি না কেন, সে এটাকে বাইনারি সংখ্যায় কনভার্ট করে নেয়।

এই যে ফেইসবুকে বাংলায় এই লেখাটি পড়ছেন, এটাও কিন্তু আসলে কিছু সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

একটা যুগ ছিল সাহিত্যের। সে যুগে সাহিত্যকে চ্যালেঞ্জ করে কোর’আন নিজেই নিজের মুজিযা প্রকাশ করেছে। এরপর একটা যুগ ছিল জ্যোতির্বিদ্যার, সেই যুগে কোর’আন জ্যোতির্বিদ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজের মুজিযা প্রকাশ করেছে। এভাবে একের পর এক চলতে থাকে।

কিন্তু, বর্তমান যুগ হলো সংখ্যার যুগ। সব কিছুকেই সংখ্যা দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। তাই সংখ্যাতত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে কোর’আন এখন নিজেই নিজের মুজিযা প্রকাশ করছে।

তো চলুন, হাতের কাছে কাগজ-কলম থাকলে, নিজে নিজেই কোর’আনের একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক মুজিযা বের করে ফেলি। খুব সহজে।


***প্রথম ধাপ***

আল কোর’আনের সূরা মোট ১১৪ টি। ১ থেকে ১১৪ পর্যন্ত ক্রমিক সংখ্যাগুলোর যোগফল ৬৫৫৫।

অর্থাৎ,

১+২+৩+৪+৫+৬+ ...........................১১০+১১১+১১২+১১৩+১১৪ = ৬৫৫৫

[পাটি গণিতের ধারার সূত্রটি ব্যবহার করে খুব সহজে যোগ করতে পারেন। ধারার যোগফল= {(১ম পদ+শেষপদ) x পদসংখ্যা / ২]


***দ্বিতীয় ধাপ***

কোর’আনের সূরা ফাতিহা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সবগুলো সূরার আয়াতগুলো যোগ করুন। যেমন –

৭+২৮৬+২০০+১৭৬+...............৫+৪+৫+৬ = ৬২৩৬

অর্থাৎ, কোর’আনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬।

[মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহার করে খুব সহজেই এই যোগটি করতে পারেন]


***তৃতীয় ধাপ***

সবগুলো সূরার ক্রমিক নং ও আয়াত সংখ্যা যোগ করুন। যোগফল জোড় সংখ্যা হলে একঘরে লিখুন, এবং বিজোড় সংখ্যা হলে অন্য ঘরে লিখুন।

সূরা ফাতিহার ক্রমিক নং (১) + আয়াত সংখ্যা (৭) = ৮ [জোড়]

সূরা বাকারা, (২+২৮৬) = ২৮৮ [জোড়]

আলে-ইমরান, (৩+২০০) = ২০৩ [বিজোড়]

নিসা, (৪+১৭৬) = ১৮০ [জোড়]

মায়িদা, (৫+১২০) = ১২৫ [বিজোড়]

ছবিতে দেখুন।





***চতুর্থ ধাপ***

জোড় ঘরের সবগুলো সংখ্যা আলাদা যোগ করুন; তাহলে পাবেন ৬২৩৬। এবং বিজোড় ঘরের সবগুলো সংখ্যা আলাদা যোগ করুন; তাহলে পাবেন ৬৫৫৫।

ছবিতে দেখুন।





কাজ শেষ। এবার নিজে নিজেই কোর’আনের মুজিযা আবিষ্কার করতে থাকুন। যারা নিজে নিজে কাজটা করতে পারবেন, তারা ব্যাপক আনন্দ পাবেন। আর যারা এত কিছু করার সময় পাবেন না, তাদের জন্যে কাজটা আমি নিজেই করে দিয়েছি।


তো, চলুন, এবার মুজিযাগুলো দেখে নেয়া যাক।


মুজিযা – ১

কোর’আনের সবগুলো সূরার ক্রমিক নম্বর যোগ করলে হয় ৬৫৫৫। আবার বিজোড় ঘরের সংখ্যাগুলোর যোগফলও হয় ৬৫৫৫।

কোর’আনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬। আবার, জোড় ঘরের সংখ্যাগুলোর যোগফলও হয় ৬২৩৬।

ছবিতে দেখুন।





মুজিযা – ২

কোর’আনে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ টি সূরার ক্রমিক নম্বর + সূরার আয়াত = জোড় সংখ্যা হয়। এবং ৫৭ টি সূরার ক্রমিক নম্বর + সূরার আয়াত = বিজোড় সংখ্যা হয়।

অর্থাৎ, জোড় ঘরে সূরার সংখ্যা ৫৭ টি। আবার, বিজোড় ঘরে সূরার সংখ্যাও ৫৭ টি।

জোড় ঘরের ৫৭ টি সূরার মধ্যে ৩০ টি সূরা জোড় সংখ্যক আয়াত বিশিষ্ট এবং বাকি ২৭ টি সূরা বেজোড় সংখ্যক আয়াত বিশিষ্ট। আবার, বিজোড় ঘরের ৫৭ টি সূরার মধ্যে ৩০ টি সূরা জোড় সংখ্যক আয়াত বিশিষ্ট এবং বাকি ২৭ টি সূরা বেজোড় সংখ্যক আয়াত বিশিষ্ট।

মুজিযা – ৩

কোর’আনের কোনো একটি সূরার একটি আয়াত কম বা বেশি হিসাব করলে, অথবা যে কোনো দুটি সূরাকে আগ-পর করে দিলে, উপরের দুটি মুজিযা আর রক্ষা করা যাবে না।

ধরুন, কোর’আনের সর্বশেষ ছোট্ট সূরা দুটিকে আগ-পর করে দেয়া হলো। অর্থাৎ, সূরা ফালাক-কে ১১৪ নং সূরা, এবং সূরা নাস-কে ১১৩ নং সূরা হিসাবে যোগ করা হল। অথবা, সূরা নাস থেকে একটি আয়াত সূরা ফালাকের সাথে যুক্ত করে দেয়া হলো। তখন উপরের মুজিযা দুটি আর ঠিক থাকবে না। জোড় ঘরের সংখ্যাগুলোর যোগফল হবে ৫৯৯৮, আর বিজোড় ঘরের সংখ্যাগুলোর যোগফল হবে ৬৭৯৩। জোড় ঘরে সূরা থাকবে ৫৫ টি। এবং বিজোড় ঘরে সূরা থাকবে ৫৯ টি।

ছবিতে দেখুন।





কোর’আনের একটি আয়াতের সংখ্যাও যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে হিসাব মিলবে না। অর্থাৎ, কোর’আনের সূরাগুলোর ক্রমিক নং এবং আয়াত সংখ্যা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।

এখানে আরো অনেকগুলো মুজিযা আছে। তাই মূল লিঙ্কটা এখানে দিয়ে দিলাম। আপনি ইচ্ছা করলে, নিজে নিজেই আরো অনেকগুলো মুজিযা বের করে ফেলতে পারবেন।



 

 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...